৬ বছরে পাল্টেছে ছিটমহলের দৃশ্যপট

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়। ঐতিহাসিক দিনটিতে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয় ১১১টি ছিটমহল। দেশের ভূখণ্ডে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি। ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে সেদিন মুক্তি পান লাখও ছিটমহলবাসী।

বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এখন তাদের ঘরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা। ভাঙা রাস্তাগুলো এখন পাকা সড়ক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেওয়া হয়েছে পাকা ঘর। সবমিলিয়ে পাল্টে গেছে জেলার ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট। পিছিয়ে পড়া ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে সরকার হাতে নেয় ব্যাপক পরিকল্পনা।

গত ছয় বছরে শিক্ষা বিস্তারে তিনটি কলেজসহ ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, পুলিশ ফাঁড়ি ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছগ্রাম, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ছয় বছর আগে যাদের ছিল না নাগরিক অধিকার, তারা পেয়েছেন নাগরিকত্ব। পেয়েছেন স্মার্ট কার্ড। রাস্তা বলতে কিছুই ছিল না, সেখানে এখন পাকা সড়ক। চিকিৎসার জন্য এখন আর আর মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দেশে ঢুকতে হয় না। তাদের গ্রামেই হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। বেকার ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। ফলে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট।

ছিটমহলের বাসিন্দাদের চিকিৎসায় নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক

গত শনিবার (৩১ জুলাই) ছিটমহল বিনিময়ের ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল গারাতি (বর্তমানে রাজমহল) মফিজার রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে শনিবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।

পঞ্চগড়-নীলফামারী জেলা বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি (বাংলাদেশ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কমিটির সভাপতি মফিজার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ প্রধান শুভ। বিশেষ অতিথি ছিলেন হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুসা কালিমুল্লাহ প্রধান। এর আগে কলেজের শহীদ মিনারের ছয়টি মশাল ও ৬৮টি মোমবাতি জ্বালানো হয়।

মফিজার রহমান বলেন, ৬৮ বছরের বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিনের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাকা ঘর। মূল ভূখণ্ডের মানুষ যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তাদের জন্য সেগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে।