সেই ১২০ টাকা বাঁধাই করে আজীবন রাখবেন বৃষ্টি

মাত্র ১২০ টাকা খরচে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কৃষক শ্যামল চন্দ্র রায়ের মেয়ে বৃষ্টি রানি রায়। কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে ব্যাংক ড্রাফট করতে ১০০ ও কাগজপত্র ফটোকপি করতে খরচ হয়েছে ১৫-২০, সবমিলিয়ে ১২০ টাকার মতো। বাকি যা হয়েছে সবই মেধার ভিত্তিতে।

নিয়োগ হওয়ার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যয় হওয়া ১২০ টাকাও তাকে ফেরত দিয়েছেন। পুলিশ সুপারের ফেরত দেওয়া সেই ১২০ টাকা বাঁধাই করে আজীবন সংরক্ষণ করে রাখতে চান বৃষ্টি রানি। শুধু তিনি নন, একই টাকা খরচ করে দিনাজপুরের মোট ৬২ জন পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কথা হলে বৃষ্টি রানি বলেন, ‘এভাবে চাকরি পাবো কখনও ভাবিনি। মনে করেছিলাম, চাকরি পেতে হলে টাকা (ঘুষ) দিতে হয়। আর আমার পরিবারের পক্ষে টাকা দেওয়াও সম্ভব না। কিন্তু বাবার ইচ্ছে ছিল, যাতে অংশগ্রহণ করি। অবশেষে আমি চাকরি পেয়েছি। আমি পুলিশ
সুপারের দেওয়া ১২০ টাকাও পেলাম। এই টাকা সংরক্ষণ করে রাখবো, যাতে করে আমি সারাজীবন মনে রাখতে পারি। পাশাপাশি বিনা টাকায় চাকরি পাওয়ার এই উদাহরণ সবাইকে দেখাতে পারি।’

শনিবার সকালেই কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া প্রত্যেক সদস্য ও তাদের অভিভাবকদেরকে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময় কনফারেন্স কক্ষে অভিভাবকদেরকে ধন্যবাদ জানান পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।

পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করায় এবং তাদের সন্তানরা মেধা ও যোগ্যতায় অবদান রাখায় তাদেরকে অভিনন্দন জানান। পরে তিনি কনস্টেবল নিয়োগ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ সময় দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শচীন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ানুল ইসলামসহ পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপারের আমন্ত্রণে মেয়ের সঙ্গে এসে অভিভূত বৃষ্টির বাবা শ্যামল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের আবাদি জমি মাত্র দেড় বিঘা (৭২ শতক)। এই জমিতে চাষাবাদ করেই কোনোরকমে চলছিল আমার সংসার। হঠাৎ গত বছর স্ত্রী মারা যায়। এখন জমিতে চাষাবাদ, বাড়িতে রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করে এক ছেলে এক মেয়েকে স্কুলে পাঠানো সবই আমার দায়িত্ব। সাংসারিক সব কাজের সহযোগিতা করে আমার মেয়ে। এবার পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করে। আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে টাকা ছাড়াই আমার মেয়ের নিয়োগ হবে। মেয়েকে বলেছি, সারাজীবন সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবা। পুলিশ সুপার স্যার সবার সামনে আমাকে যে সম্মান দিলো, আমার ও আমার মেয়ের যে প্রশংসা করলো তা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, এবার দিনাজপুর জেলায় ৬২টি পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং করে দুই হাজার ৪৮০ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়। পরে প্রথম দিনেই মাঠে শারীরিক মাপ ও ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে এক হাজার ১০৩ জনকে নেওয়া হয়। এরপর পুশইন, হাইজাম্প, লংজাম্প, দৌড়সহ বিভিন্ন
শারীরিক কসরতে ৬৪২ জন উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় ১৫৭ উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় ৬২ জন স্থান লাভ করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ৬২ জনের মধ্যে পুরুষ সাধারণ কোটায় ৩১, নারী সাধারণ কোটায় ৯, পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৩, পুরুষ পুলিশ পোষ্য কোটায় ৫, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পুরুষ কোটায় ৩ ও পুরুষ আনসার ও ভিডিপি কোটায় একজন রয়েছেন।