কদিন পরেই বাজারে আসছে মধু মাসের লিচু ও আম। আর এই পণ্য পরিবহনের জন্য অন্যতম উপকরণ বাঁশের ঝুড়ি। তাই বাড়তি চাহিদা মেটাতে ঝুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর মাহালি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তবে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই কাজে তেমন লাভ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে ঐতিহ্যবাহী পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে বসবাস ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠী মাহালি সম্প্রদায়ের। সেখানে বসবাসরত ২৫টি পরিবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। সারা বছরই ঝুড়ি, ডালা, কুলাসহ বাঁশের বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি চলে তাদের জীবন ও জীবিকা।
বিরেন মাহালি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাঁশ ও বেত থেকে বিভ্ন্নি গৃহস্থালি পণ্য তৈরির কাজ দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষেরা করে আসছেন। বর্তমানে আসছে মধু মাসের অন্যতম ফল লিচু। এ কারণে এখন ফলের ঝুড়ি তৈরির মৌসুম। আমরা সবাই ফলের ঝুড়ি তৈরির কাজ করছি। এর পর আমের মৌসুম শুরু হবে, তখন আমরা আমের ঝুড়ি তৈরি করবো। এসব ঝুড়ি বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাগান মালিকরা এসে কিনে নিয়ে যান। ইতোমধ্যে ফলের ঝুড়ির অনেক ওর্ডার এসেছে, কাজও শুরু হয়েছে। এরপর অন্যান্য সময়ে যেসব প্রয়োজন, বিশেষ করে ডালা, কুলা, ধামা ইত্যাদি তৈরির কাজ হবে বলে জানান তিনি।
বাশন্তি মাহালি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের কারণে এখন বাঁশ ও বেতের পণ্য মার খাচ্ছে। এখন ফলের মৌসুমে ঝুড়ি তৈরির অর্ডার আসছে। এরপরেও প্লাস্টিকের ক্যারেট প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে। যে কারণে আমাদের বাঁশের কাজ কমে গেছে। এখন আমাদের মৌসুম, কিন্তু একমাস আগে থেকে যদি বাঁশ কিনে এসব তৈরি করতে পারতাম তাহলে লাভ হতো। কিন্তু কী করার, আমাদের তো পুঁজি সংকট রয়েছে। আমাদের যখন পুঁজি থাকে, তখন করি। আর না থাকলে কাজ করতে পারি না। তাই আমাদের স্বল্প সুদে লোন দেওয়া হলে অন্তত পক্ষে কাজ করে টিকে থাকতে পারতাম।
উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাহালি সম্প্রদায়ের মানুষজন পারিবারিক ঐতিহ্য ও পেশা হিসেবে বাঁশ ও বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাঁশ ও বেতের তৈরি হওয়ায় এসব পণ্য পরিবেশের জন্য উপকারী। আর মাহালি সম্প্রদায়ের মানুষজনও পেশা টিকিয়ে রাখতে পারছে। তাই পরিবেশবান্ধব এই শিল্পকে ধরে রাখতে সহায়তা দেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরে তাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্যসহায়তা, প্রণোদনাসহ তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাশাপাশি লিচু ও আম ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে প্লাস্টিক ক্যারেট ব্যবহারের পরিবর্তে বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে পণ্য পরিবহনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।