নদীর পাড়ে লাশ পুঁতে রাখার নেপথ্যে ‘ইয়াবা ব্যবসা’

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে শালু মিয়া না‌মে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যার পেছনে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা। শুক্রবার (৩ জুন) দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে রৌমারীর দাঁতভাঙা ইউনিয়নের বাঘেরহাটের দক্ষিণ পাশের টেকানী গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর পাড় থেকে মাটি খুঁড়ে অপহৃত শালু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পু‌লিশ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে শালু মিয়াকে তার স্ত্রীর সামনে থেকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগ ওঠে দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। তারা শালু মিয়াকে ফোনে ডেকে উপজেলার কাউয়ারচর স্লুইসগেটের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যায়। 

এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শালুকে অপহরণের অভিযোগে গত ২৯ এপ্রিল ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও খয়বর আলীসহ অজ্ঞাত তিন জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় মামলা করেন স্ত্রী রেজেকা খাতুন। 

এ ঘটনায় ৩০ মে রাতে মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে জাকির হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে রৌমারী থানায় এনে ৩১ মে কুড়িগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন একই ইউনিয়নের কাউয়ারচর গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। শালু মিয়া একই ইউনিয়নের কাউয়ারচর গ্রামের মৃত চাঁন মন্ডলের ছেলে। জাকিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর দুই আসামি খয়বর আলী ও জিয়া মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: অপহরণের পর হত্যা, নদীর পাড়ে লাশ পুঁতে ফেলেছে তারা

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্রেফতারের পর তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকালে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে শালু মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।’

হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘জাকির হোসেন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। জাকিরের সহযোগী হিসেবে মাদক চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত ছিল শালু মিয়া। জাকির হোসেনের ইয়াবা চালানের বড় একটি অংশ আত্মসাৎ করে শালু। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। পরে জাকির তার সহযোগী খয়বর ও জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শালুকে তার স্ত্রীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা জাকিরের বাড়ির পাশে জিঞ্জিরাম নদীর পাড়ে তারই জমিতে শালুর লাশ বস্তায় ভরে পুঁতে রাখে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘শালু নিজেও মাদক কারবারি। কৌশলগত কারণে আত্মগোপনে থাকতো। তবে ওই সময় পরিবারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতো। কিন্তু এবার অপহৃত হওয়ার পর পরিবার খোঁজ পাচ্ছিল না। তখন তার স্ত্রী পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিয়াউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মাহফুজুর রহমান, সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার ও রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ।