রংপুরে দুই বাসের সংঘর্ষ

গাঁজা খেয়ে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক, অভিযোগ যাত্রীদের

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। রবিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জের খারুভাজ সেতুর কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত জোয়ান পরিবহনের বাসে থাকা যাত্রীদের অভিযোগ, হেলপারের সঙ্গে গাঁজা সেবন করে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুই বাসের সংঘর্ষে মোট ৩৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন: রংপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৯

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জোয়ান পরিবহনের যাত্রী আমজাদ হোসেন বলেন, ‌‘রংপুর মেডিক্যাল কলেজ মোড় থেকে বাস ছাড়তে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। সিট বাদেও বাসের ছাদে অনেক যাত্রী তোলেন হেলপার, সুপারভাইজার ও চালক। এরপর হেলপারের সঙ্গে গাঁজা সেবন করতে করতে বাস চালানো শুরু করেন চালক। এ সময় বাসের ভেতর গাঁজার ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন যাত্রী প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তারা কারও কথা শোনেননি। দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে সৈয়পুরের দিকে যাওয়ার পথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেও চালক বাসের গতি কমাননি। যাত্রীরা ধীরে চালানোর অনুরোধ করলেও শোনেনি। এরপর হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। আর কিছুই বলতে পারবো না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে।’

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রংপুর মেডিক্যালে ছুটে আসছেন নিহত ও আহতদের স্বজনরা

একই কথা জানান ওই বাসের যাত্রী সৈয়দপুরের আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আমি বাসে উঠতেই ভেতরে গাঁজার গন্ধ পাই। যেহেতু ওটাই সৈয়দপুর যাওয়ার শেষ বাস ছিল, তাই বিষয়টা এড়িয়ে যাই। দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে গেছি।’ 

আব্দুস সালামের সঙ্গে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তার বন্ধু মোখতার। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনিও রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মোখতার অভিযোগ করে বলেন, ‘গাঁজা সেবন করে বাস না চালালে এবং বেপরোয়া গতিতে না চালালে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না।’

দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জন মারা যান। চার জন রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন—নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক অলিউর রহমান জুয়েল, জোয়ান পরিবহনের বাসচালক জীবন ও যাত্রী ধনঞ্জয় চন্দ্র।

এদিকে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে রংপুর মেডিক্যালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অনেকে স্বজনদের খোঁজে সকাল থেকে হাসপাতালে ভিড় করছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন ছাত্রলীগ নেতা অলিউর রহমান জুয়েলের চাচি ফাতেমা বেগম। তার সঙ্গে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, ‌‘আমার ভাতিজা আহত অবস্থায় ভর্তি আছে শুনে সকালে রংপুর মেডিক্যালে আসি। এর কিছুক্ষণ পর শুনি সে মারা গেছে।'

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানা, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহনের বাস সৈয়দপুরে যাচ্ছিলো। অপর দিকে ইসলাম পরিবহনের একটি বাস সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিলো। রংপুর-দিনাজপুর সড়কের শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে আসলে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জন মারা যান। আহত হন কমপক্ষে ৩৫ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার শুরু করেন। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করেন। আহত ৩৫ জনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল ও তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চার জন মারা গেছেন।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ জানান, জোয়ানা পরিবহনের চালক গাঁজা সেবন করে বাস চালাচ্ছিলেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। হেলপারও তার সঙ্গে গাঁজা সেবন করছিলেন। এই অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে নিহত পাঁচ জনের কারও পরিচয় এখনও জানা যায়নি।