সবাই দাবি আদায়ে ব্যস্ত, বিপদে সাধারণ মানুষ

নানা দাবি আগামীকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে সমাবেশ করবে বিএনপি। আর সড়কে নসিমন, করিম ও থ্রি হুইলার বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুরে দুদিনের জন্য বাস ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক সমিতি। এতে রংপুরের আট জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস বন্ধ থাকলেও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পুরো বিভাগের মানুষ। তাদেরকে যেমন কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীলফামারীর এক যাত্রী অভিযোগ করেন, ‘আগামীকাল শনিবার রংপুরে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করা হয়েছে। আমরা রাজনীতি করি না, রাজনীতি বুঝিও না, তাহলে কেন যাত্রীদের বিড়ম্বনা?’

সৈয়দপুর টার্মিনালে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের দম্পতি আরিফুল ইসলাম ও সাবিয়া আকতার বলেন, ‘জরুরি কাজ থাকায় ঢাকাগামী একটি কোচে রাতে সৈয়দপুরে এসেছি। এখন ফিরে যেতে হবে ঠাকুরগাঁওয়ে। কিন্তু টার্মিনালে এসে দেখি, কোনও বাস চলছে না। বেশি ভাড়া দিয়ে বিকল্পভাবে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’

নীলফামারীর জেলা শহরের নিউবাবুপাড়ার কাপড় ব্যবসায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দোকানের মালামাল শেষ হওয়ায় রংপুরে যাওয়া অতি জরুরি। কিন্তু বাস মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে দুদিন পর যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এতে সময়ের অপচয়সহ আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতি হলো। এর দায় কে নেবে?’

nilphamari300

সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া (দোলাপাড়া) গ্রামের জহুরুল হক বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বড় বোন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করে বাস না পাওয়ায় এখন ইজিবাইকে যেতে হচ্ছে। ১৫০ টাকার ভাড়ার স্থলে আমার ২৫০ টাকা মাশুল গুনতে হবে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংগঠনটি পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। তাই রাজনৈতিক কারণে বাস ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

অপরদিকে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম অভিযোগ করেন, ‘পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সব যানবাহন বন্ধ করে দিলেও রংপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। আমরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। তবে সমাবেশ বন্ধে যে যতই চেষ্টা করুক না কেন, রংপুরে বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না কেউ।’

নীলফামারী বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শানুর দাবি, ‘রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকে এই ধর্মঘট চলছে। তবে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়। মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচলের প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এতে আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে প্রয়োজনে বড় পরিসরে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহনের শ্রমিকরা এ ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পরিবহন বন্ধ রেখেছে। ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির মহাসমাবেশের কোনও সম্পর্ক নেই।’

রংপুর বাস টার্মিনাল

জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার বলেন, ‘আগামীকাল আমাদের রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশ ঠেকাতে সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। বিএনপি কোনও সমাবেশের ডাক দিলে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় বাধার সৃষ্টি করে। সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে ইনশাল্লাহ।’

অন্য বিভাগ থেকেও রংপুরে বাস যাচ্ছে না

ধর্মঘট থাকায় সারা দেশ থেকে কোনও বাস ঢুকছে না রংপুরে। ঘোষণা দিয়েই রংপুর রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বগুড়া ও রাজশাহী জেলা বাস মালিক সমিতি। এতে রংপুরের উদ্দেশে বের হওয়া যাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।

বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় আহমেদুর রহমান দুলাল নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বাংলা ট্রিবিউনের বগুড়া প্রতিনিধির। এই যাত্রী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান। বগুড়ায় পৌঁছার পর বাসের হেলপার তাদের ভাড়া ফেরত দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অধিক ভাড়ায় গাইবান্ধার দিকে রওনা দেন।

একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েন নাটোর থেকে রংপুরগামী বাসে ওঠা ব্যবসায়ী গোলাম মোরশেদ। তিনি জানান, আত্মীয় বাড়ি নাটোর থেকে স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে বাসে উঠেছিলেন। তাদের রংপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও বগুড়া শহরের চারমাথায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অটোরিকশা বা অন্যকোনো যানবাহনে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।