প্রেমিকার প্রেমিককে স্টেডিয়ামে ডেকে হত্যা, লাশ ফেললো ময়লার স্তূপে

দিনাজপুরে কলেজছাত্র শাহরিন আলম বিপুল হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতারের পর এই হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ।

জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির সিঁড়ির নিচ থেকে শাহরিন আলম বিপুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনার তিন দিন পর এই চার জনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। এর আগে, শনিবার (৪ মার্চ) সকাল ৯টায় দিনাজপুর জেলা স্টেডিয়ামের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সোমবার স্টেডিয়ামের গ্যালারির সিঁড়ির নিচ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- দিনাজপুর সদর উপজেলার শালকী (বোয়ালমাড়ী) এলাকার রশিদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২০), ৬নং উপশহরের উজ্জল হোসেনের ছেলে শাকিব শাহরিয়ার (২২), নিশ্চিতপুর এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে আশরাফুল হোসেনে মিলন (১৮) ও ৭নং উপশহর এলাকার হামিদুর রহমানের ছেলে আসিফ মাহমুদ হৃদয় (১৯)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মাহামুদা (ছদ্মনাম) নামের একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর ওই মেয়ের বান্ধবী ছিল পূরবী (ছদ্মনাম)। মাহামুদা দেলোয়ারের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করায়, পূরবীর কাছ থেকে প্রেমিকার খোঁজ খবর নিত দেলোয়ার। একপর্যায়ে তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই বার কথাও বলেছে। কিন্তু কিছুদিন পর পূরবীরর সঙ্গে শাহরিন আলম বিপুলের সঙ্গে সখ্যতা হয়। যা দেলোয়ার কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। ফলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পুলিশ সুপার বলেন, বিপুল দিনাজপুর সিটি কলেজের একাদশ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সে ছবি তুলতে পছন্দ করতো। এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে দেলোয়ার একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথপোকথন শুরু করে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে সম্পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং একটি ক্যামেরা ধার দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। দেলোয়ার হোসেন ভুক্তভোগী বিপুলকে বলে, দিনাজপুর স্টেডিয়ামে সকাল ৯টায় একটি ছেলে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই পথ আসার জন্য দেলোয়ার বিকাশে ১০০ টাকা দেয় বিপুলকে।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ্ ইফতেখার আহমেদ বলেন, দেলোয়ারের এই ফাঁদে পা দেয় বিপুল। পরে স্টেডিয়ামে এলে প্রথমে পূরবীকে নিয়ে তর্ক শুরু হয়। পরিকল্পনা মাফিক দেলোয়ারসহ তার কয়েকজন সহযোগী মিলে বিপুলের মাথার পেছনে আঘাত করে। পরে গলায় চাকু মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গ্যালারির সিঁড়ির নিচের ময়লার স্তূপে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, মৃত্যুর পর আবর্জনা দিয়ে বিপুলের লাশ তারা ঢেকে রাখে। দেলোয়ার বিপুলের সঙ্গে মোবাইলের মেসেঞ্জারের কথাবার্তা ডিলিট করে। অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়। মূলত একটি ত্রিভুজ প্রেমের সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশের টিম তদন্ত শুরু করে বিভিন্ন জায়গা থেকে চার জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজন পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলমান রয়েছে। আসামিদেরকে আদালতে পাঠানো হবে এবং রিমান্ড আবেদন করা হবে।

উল্লেখ্য, শনিবার সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে ওষুধ কেনার কথা বলে বাসা থেকে বের হন শাহরিন আলম বিপুল। পরে আর বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করে তার পরিবার। কোথাও না পেয়ে রবিবার রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নিহত বিপুলের বড় ভাই শাহরিয়ার আলম। সোমবার দুপুরে দিনাজপুর জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির সিঁড়ির নিচের ময়লার স্তূপ থেকে বিপুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।