বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীসহ ২৪ জন নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ মামলায় বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে ছাত্রদের তোপের মুখে ওই চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার দুপুরে চেয়ারম্যান আফসার আলীকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর আগে রাতেই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। আফসার আলী বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের দায়ের করা মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের পর সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বোচাগঞ্জ থানায় আসেন বাড়ি ভাঙচুরের মামলা করতে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে ছিল। আফসার আলী থানায় আসলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আফসার আলী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলে সেখানে স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আশেপাশ থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ থানায় চলে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের পদ থেকে আফসার আলীর পদত্যাগের দাবি তোলেন। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আফসার আলী।
পদত্যাগের পর রাতেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে থানায় মামলা করেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন। মিছিলটি সেতাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আসলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে আসামিরা মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়। মারপিট করার পাশাপাশি ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় আসামিরা হত্যা ও গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। তাদের হুমকিতে শিক্ষার্থীরা আত্মগোপন করায় কোনও চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেননি।
মামলায় সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব আব্দুল বাশার, কাউসার, আব্দুস সবুর, ঈশান ইসলাম, শাহ জাহান, বাপ্পি সরকার, সিমন ইসলাম, নাসিরুল ইসলাম নয়ন, লিয়ন ইসলাম, মেহেদি হোসেন, রিয়াদ হোসেন, নাঈম ইসলাম, শাহ নেওয়াজ সৌরভ, আশরাফুল ইসলাম আকাশ, ছুটি, শাওন ইসলাম হৃত্তিক হোসেন, সমুদ্র ইসলাম, সোহেল রানা, আশরাফ আলী তুহিন, আরাফাত হোসেন জনি, জাহাঙ্গীর আলম লিটনসহ আরও ৭০-৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।