বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও বেরোবির কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট মাসেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৫ মে) বিকালে শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পার্কের মোড় এলাকা ঘুরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে শহীদ আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এর আগে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন ইংরেজি বিভাগের সুমন সরকার, গণিত বিভাগের আল মুরসালিন মুনা, একই বিভাগের ইমরান আহামেদসহ অন্য শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করেন, শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ তাকে হত্যার পেছনে যারা কুশীলব শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে- যাদের ভিডিও এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃশ্যমান তাদের বিরুদ্ধে আট মাসেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী বেরোবি শিক্ষার্থীরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি- পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহাফুজ, সহ-সভাপতি ফজলে রাবি, বিধান, আবদুল্লাহ আল নোমান খান ও তানভীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর ও ফরহাদ হোসেন এলিট, দফতর সম্পাদক বাবুলসহ অনেকে। এ ছাড়াও রিফাত, আরিফুজ্জামান ইমন, গাজীউর, শাহিদ হাসান ও মামুন।
এর সঙ্গে বহিরাগতরা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জড়িত ছিল। তারপরও মামলা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে হামলায় প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িত ও ইন্ধনদাতা শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেককে।
সূত্র জানায়, নতুন করে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মামলার আসামি করা হলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ার অজুহাতে তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত ও বহিরাগতের নাম উল্লেখ করে দুটি অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তাদের শাস্তি দাবি করেন। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, সিসিটিভির ফুটেজ, বিভিন্ন ছবি থেকে এসব হামলাকারীকে তারা শনাক্ত করেছেন এবং তাদের স্পষ্টভাবে দেখা গেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শামসুর রহমান সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা আবারও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
আবু সাঈদের সহযোদ্ধা রোবায়েদ জাহিন বলেন, মামলা না হওয়ায় হতাশ। প্রথম থেকে প্রশাসন ধীর গতিতে কাজ করছে। তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনও মামলা করতে পারেনি, এইটা প্রশাসনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ফারজানা জান্নাত তসি বলেন, আবু সাঈদ মারা গেছে গত প্রশাসনের দীর্ঘ ব্যর্থতার কারণে। জুলাই আন্দোলনে ১৪০০ মানুষ মারা গেছে, আবু সাঈদের পারস্পেকটিভ ভিন্ন। আবু সাঈদ তার ক্যাম্পাসের সামনে মারা গেছে। আমার ছাত্র আমার ছাত্রকে মারার জন্য উসকে দিয়েছে। আমার মনে হয় এই প্রশাসন এই জায়গাটায় কোনও কাজ করেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, আমরা হামলাকারীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এ ছাড়াও জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা করা হবে।