থানা হাজতে ‘আত্মহত্যা’ই করেছিলেন আসামি বাবু!

জৈন্তাপুরে হাজতে নজরুল ইসলাম বাবুর মৃত্যুসিলেটের জৈন্তাপুর থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা নারী নির্যাতন মামলার আসামি নজরুল ইসলাম বাবু আত্মহত্যাই করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। সিলেট মেডিক্যাল কলেজ ওসমানী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. আদিলুজ্জামান শনিবার দুপুরে বাবুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, থানা হাজতে মৃত্যু হওয়া বাবুর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে সে আত্মহত্যা করেছে। তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। 

এদিকে থানা হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতকে (উত্তর) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন- সিলেট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী পুলিশ সুপার নূরুল আফসর খাঁন ও  সিলেটের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম বাবু জৈন্তাপুর উপজেলার কহাইগড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের (মৃত) ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ভোর রাত ৩টার দিকে শহরের বটেশ্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার এসআই সফিক ও এএসআই হুমায়ুনের নেতৃত্বে পুলিশ একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার (১৯ মে) ভোরে হাজতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

সিলেট  জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা (গণমাধ্যম) জানান, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় থানা হাজতে থাকা নারী নির্যাতন মামলার আসামি নজরুল ইসলাম বাবু আত্মহত্যা করেছেন। এঘটনায় পুলিশের কোনও গাফিলতি আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ তিনি জানান, তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্ত চলার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে থানা হেফাজতে বাবুল কিভাবে আত্মহত্যা করেছে সে ভিডিও ফুটেজও হস্তান্তর করা হয়। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা সে থানা হাজতের ভেতরে কম্বল ছিঁড়ে দড়ি তৈরি করে। এরপর সে গলায় বেঁধে প্রথম দিকে তিন থেকে চার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এসময় দায়িত্বরত কনস্টেবল বিষয়টি খেয়াল করেননি। এরপর বাবু কম্বল ছিঁড়ে লম্বা করে জানালার একটি রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে।

সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার জাহিদ জানান, ময়নাতদন্তের সময় ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা তার শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন খুঁজে পাননি। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন সে আত্মহত্যা করেছে। বাবুর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। তার বোন জামাই লাশটি পুলিশের কাছে থেকে দাফনের জন্য নিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর ঘিলাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাসরিন ফাতেমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে ফাতেমা বাবার বাড়িতে চলে যান। সম্প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ এনে জৈন্তাপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এরপরই বাবুকে গ্রেফতার করা হয়।

 

/এফএস/

আরও পড়ুন-

'নাশকতার সরঞ্জাম' খুঁজতে খালেদার কার্যালয়ে পুলিশ

ধর্ষণে সহযোগিতার প্রমাণ পেলে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা