ধান বিক্রি করে সারা বছরের খরচ জোগাতেন হাওরের মানুষজন। এসময় নতুন জামাকাপড়ও কেনা হতো পরিবারের সবার জন্য। তবে এবার গ্রীষ্মে আগাম বন্যা ও বর্ষায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভেস্তে গেছে তাদের সব পরিকল্পনা। সরকারি সহায়তায় কপালে কিছু চাল জুটলেও পরনের কাপড়ের সংকটে ভুগছেন এসব মানুষজন। তাদের শঙ্কা, এবারের বছরটি হয়তো কাটাতে হবে পুরনো ছেঁড়া কাপড়েই।
তাহিরপুর উপজেলার বিননগর গ্রামের রজব আলী বলেন, ‘বৈশাখের ধান কেটে গোলায় তোলার পর কৃষকের গায়ে নতুন জামাকাপড় দেখা যেতো। এবছর কারও গায়ে নতুন জামা নেই। সবাই গতবারের জামাকাপড় জোড়াতালি দিয়ে পরছেন।’
ইচ্ছারচর গ্রামের দিলনেহার বেগম জানান, খরচার হাওরে ৭ কেয়ার (৩০ শতাংশ=১ কেয়ার) জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন তিনি। চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় হাওরের কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। পুরোটা বছর কিভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। নিজের ও তিন মেয়ের জন্য এবার কোনও কাপড় কিনতে পারেননি।
গৌরারং গ্রামের জাহারুনেচ্ছা বলেন, ‘বৈশাখি ধান বিক্রি করে পরিবারের লোকজনের জন্য কাপড়চোপড় কিনতাম। এবছর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাত-কাপড়ের অভাব দেখা দিয়েছে। ত্রাণের চাল দিয়ে কোনও রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও পরার কাপড়ের অভাব মেটাতে পারছি না।’
ললিতা বেগম নামের আরেক গৃহিণী জানান, ৬ সদস্যের পরিবারে তার স্বামী একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বৈশাখি ধান তুলে গৃহস্থ নুতন জামাকাপড়, শাড়ি-লুঙ্গি-গামছা কেনেন। এবছর গামছা কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের। পরপর দু’বার ফসলহানির পর তাদের কাপড় কেনা তো দূরের কথা, তিনবেলা পেটপুরে ভাত খাওয়াটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। জেলার সবক’টি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষের এখন একই অবস্থা।
সুনামগঞ্জের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিডি, ভিজিএফ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। সরকার যদি কাপড় বরাদ্দ দেয় তাহলে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।’
গত ২৮ মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যায় হাওরের এক লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। যার বাজার মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা। এতে তিন লাখ ২৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এক লাখ ৬৮ ভিজিএফ ও ২৩ হাজার ৬১৫টি ভিজিডি কার্ড ও জিআর চাল বিতরণের মাধ্যমে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, খোলা বাজারে ১১০টি পয়েন্টে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। দুর্গতদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করছে।
দ্বিতীয় দফায় আগস্ট মাসের বন্যায় ১০ হাজার হেক্টর আমন জমি ও বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৯৪ হাজার লোক সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন- নাফ নদীতে আরও ১৯ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার