নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই শ্রীমঙ্গলে বহুতল ভবন নির্মাণ, বাড়ছে দুর্ঘটনা

মৌলভীবাজারপর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হচ্ছে হোটেল-মোটেল। কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিন আগেও সেখানে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে পড়ে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর রাধানগর গ্রামে শ্রীমঙ্গল প্যারাগন রিসোর্ট নামে একটি বহুতল ভবন থেকে পড়ে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একই দিন রাতে নির্মাণাধীন অপর একটি ভবনে কাজ করার সময় বসত তাজু মিয়া (৩৫) নামে এক শ্রমিক পাঁচ তলা থেকে পড়ে যান। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তাজুল একই এলাকার মৃত আনফর মিয়ার ছেলে। এছাড়া গত ২২ অক্টোবর একইভাবে ভবনের পঞ্চমতলা থেকে পড়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার শাকিল মিয়া (২৬) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

সরজমিনে দেখা গেছে, ছয় তলাবিশিষ্ট ভবনের পাঁচ তলার ছাদের ওপর শ্রমিকরা নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়াই কাজ করছেন। সেখানে নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ চলছে। বেশির ভাগ নির্মাণাধীন ভবনেই একই অবস্থা।

স্থানীরা জানান, ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
তাজুলের শ্বশুর ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘এত বড় ভবন নির্মাণে কর্তৃপক্ষ কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখেনি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘গত মাসে এই ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর পরও, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ফোরম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। শ্রমিকরা যদি অসর্তক থাকেন, নিরাপত্তা সামগ্রী না পরেন, তবে দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের কী করার আছে?’ তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকদের সেফটি ইক্যুইপমেন্ট দেওয়া আছে। এটা ঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি ছিল না, যে কারণে এই দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন আমরা নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জানতে চাইলে কলকারখানা অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘নিহত ও আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও ভবন নির্মাণের বিধিমালা প্রয়োগে বাধ্য করতে মালিকপক্ষকে নোটিশ করা হচ্ছে। এছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রমিককল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকেও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

শ্রীমঙ্গল গৃহনির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সমির মিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। যারা মারা গেছেন তারা আমাদের সংগঠনের সদস্য নায়, তবুও আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাবো।’