‘জানতাম পুলিশের চাকরিতে লাখ টাকা লাগে, পেলাম একশ টাকায়’

চাকরিপ্রার্থীরা‘‘আমি মুচির সন্তান। বাবা আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। আমার স্বপ্ন ছিল, আমি যেন দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। যখন বাবাকে বলতাম, পুলিশে চাকরি করবো, বাবা বলতেন, ‘পুলিশের চাকরি পেতে ৫-৬ লাখ টাকা লাগে, এত টাকা আমি কোথায় পাবো। রোজগারের টাকায় সংসার চলে না, কীভাবে আমি তোকে এত টাকা দেবো। তুই মুচির সন্তান, তুই কি পুলিশ হতে পারবি।’ যখন একশ টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো, আমি আবেদন করি। আজ চাকরি পেলাম। এজন্য আমি ও আমার পরিবার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ পুলিশে চাকরি পাওয়া স্বপন রবি দাস এসব কথা বলেন। সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন মাঠে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গণিগঞ্জ বাজারের বাঁশি রাম রবি দাসের ছেলে। তিনি কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মধুয়ারচর গ্রামের শাহীন আহমদ বলেন, ‘আগে জানতাম পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা লাগে। আর এখন একশ টাকাতেই চাকরি পেলাম।’

চাকরি পাওয়া তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের ভূমিহীন পরিবারের মেয়ে আছমিনা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা নেই। কাকা আমাদের লালন-পালন করেছেন। আমরা পাঁচ বোন দুই ভাই। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার অবস্থা আমাদের নেই। একশ টাকায় পুলিশে চাকরি পাওয়া যাবে, এ কথার ওপর বিশ্বাস করে আবেদন করি। চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করেছি।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের সাটিং মারেকের মেয়ে ঝিনুক মারেক পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ভাই এক বোন। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। একশ টাকায় আবেদন করে চাকরি পেয়ে আমি খুশি।’

কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন তারা
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের অমৃতশ্রী গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্র দাসের মেয়ে অর্পিতা দাস বলেন, ‘একশ টাকা দিয়ে পুলিশের চাকরি মিলবে, এটা কখনও ভাবিনি। কিন্তু, একশ টাকা দিয়েই পুলিশের চাকরি পেয়েছি।’

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালে জেলা পুলিশ লাইন মাঠে ফল ঘোষণার পর পুলিশ সদস্যপদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এভাবে তাদের অনুভূতিগুলো সবার সামনে ব্যক্ত করেন। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।  পুলিশ সদস্য পদে মোট ১ হাজার ৬শ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৫ জন তরুণ-তরুণীকে চূড়ান্ত করা হয়। সাধারণ কোটায় ১২৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৭২ জন, সাধারণ কোটায় নারী ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৭ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ৩ জন, উপজাতি কোটায় ২ জন ও আনসার কোটায় ৩ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। ফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা এবং সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আজাদ ও মামুন চিশতিসহ নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধিরা।

কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া নাসিমাপুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ বলেন, ‘পরিপূর্ণ পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সুনামগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলাম একশ টাকায় পুলিশ সদস্য নিয়োগ হবে। কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে  নিয়োগ হয়েছে, চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের কাছ থেকে সাংবাদিকরা তা জানতে পারবেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা, শারীরিক যোগ্যতা, মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কারও কোনও সুপারিশে, কারও কোনও তদবিরে চাকরি হয়নি। মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে চাকরি হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’