স্বামী, ভাশুর ও দেবরের ফাঁসি চান তুহিনের মা

তুহিন‘আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি চাই। স্বামী, ভাশুর, দেবর যেই হোক, আমি তাদের ফাঁসি চাই। যে স্বামী নিজের সন্তানকে খুন করতে পারে, সে আমাকেও খুন করতে পারে। আমার কোনও সন্তান তাদের কাছে নিরাপদ না। আমি তাদের বিশ্বাস করি না। আমি আর কিছু চাই না, শুধু ফাঁসি চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন স্বজনদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া পাঁচ বছর বয়সী তুহিনের মা মনিরা বেগম।
রবিবার (২০ অক্টোবর) ফোনে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি তার ছেলের খুনের সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসি দাবি করেন।
তুহিনের মা বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি আমার সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে যাই। ঘরের সবার চিৎকারে জেগে উঠে দেখি তুহিন বিছানায় নেই। পরে যখন জানতে পারি আমার ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তারপর থেকে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আর কিছু বলতে পারি না।’
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউড়া গ্রামে পাঁচ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় গ্রামের আধিপত্য বিস্তারের জেরে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের স্বজনরাই তাকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। পাশবিক কায়দায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
কেজাউরা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, কেজাউড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গোষ্ঠী অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত। একপক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার, আর অপরপক্ষে তুহিনের চাচা মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির। এই অন্তর্দ্বন্দ্বে নির্মম শিকারে পরিণত হয় তুহিন। মুছাব্বির শিশু তুহিনের চাচা।
এর আগে ২০০১ সালে মুজিবুর নামে এক কৃষক ও ২০১৫ সালে খুন হন নিলুফা নামে এক গৃহবধূ। দুটি খুনের ঘটনায়ই বিবদমান দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে পরস্পরকে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। মুজিব খুনের ঘটনায় আসামি করা হয়েছিল তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরকে। অপরদিকে গৃহবধূ নিলুফা হত্যা মামলায় আসামি করা হয় আনোয়ার মেম্বার পক্ষের ১৬ জনকে।
কেজাউড়া গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, এই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে শিশু তুহিনকে নৃশংস কায়দায় খুন করে তার স্বজনরা। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।
এদিকে তুহিনকে হত্যার ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তুহিনের চাচা মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির, নাসির উদ্দিন, জুলহাস, জমসেদ আলী, বাবা আব্দুল বাছির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে জুলহাস, শাহরিয়ার ও বাবা আব্দুল বাছির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্তক কর্মকর্তা এসআই আবু তাহের মোল্লা তুহিনের বাবা-চাচাসহ তিন জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
দিরাই থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত নিখুঁতভাবে করা হচ্ছে, যাতে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারেন।’