গাঁজা পার্টিতে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা

মামলামৌলভীবাজারে বাসায় গাঁজা পার্টির আয়োজন করে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী বাদী হয়ে সোমবার (৩১ আগস্ট) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে মডেল থানা পুলিশ তা মামলা হিসেবে আমলে নেয়। মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক।

মামলায় এজাহারে ছাত্র ফ্রন্ট, মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব তুষারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জেলা বাসদের সদস্য রায়হান আনসারী ও নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মারজিয়া প্রভাকে ধর্ষণের সহযোগী উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট রাতে মৌলভীবাজার শহরের সোনাপুর এলাকার মাহমুদ এইচ খান নামে এক তরুণের বাসায় ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। ওই দিন ওই বাসায় গাঁজা পার্টি দেওয়া হয়। এই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন পাঁচ জন তরুণ-তরুণী। সেখানে সজীব তুষার এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি চাপা থাকলেও প্রায় ২০ দিন পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদ এইচ খান পোস্ট দিলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

এদিকে, ওই ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র সমালোচনা, প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষও।

অপরদিকে, মামলার আগেই সামাজিক মাধ্যমে রটে যাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সজীব তুষার এবং রায়হান আনসারীকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবে এক জরুরি সভা ডেকে মাহমুদ এইচ খানের সহযোগী সদস্যপদ বাতিল করে।

মাহমুদ এইচ খানের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, মাহমুদ এইচ খানের মৌলভীবাজারের বাসায় গত ৩ আগস্ট ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়। পার্টিতে উপস্থিত হন ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সজীব তুষার, বাসদ কর্মী (বাসদ মৌলভীবাজার জেলা বর্ধিত ফোরামের বহিষ্কৃত সদস্য) আয়কর আইনজীবী রায়হান আনসারী, নারী সুরক্ষা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মার্জিয়া প্রভা এবং ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। মাহমুদ এইচ খান ওই স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন, বাসায় আড্ডার ফাঁকে তুষার গাঁজা বের করে সবাইকে নিয়ে সেবন করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে বেশি গাঁজা খাওয়ান তিনি। গাঁজা খাওয়ানো নিয়ে মাহমুদ এইচ খান প্রতিবাদ করলেও মার্জিয়া প্রভা ও রায়হান আনসারী মাহমুদকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে গাঁজা খেতে প্ররোচিত করেন। একটা পর্যায়ে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে ঘুমানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলে তুষার তাকে রুম ও বিছনা দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সজিব তুষার।

এই বিষয়ে মার্জিয়া প্রভা ও তার বন্ধু রায়হান আনসরী বলেন, ‘মাহমুদ এইচ খান যে অভিযোগ এনেছে তা ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহমুদ এইচ খান তার পোস্টে তার নিজের মতো করে আংশিক আলাপ দিয়ে ঘটনাটিকে সাজিয়েছেন। সেদিন রাতে মেয়েটি যখন আসে তখন থেকেই সজিব তুষারের সঙ্গে আমরা মেয়েটিকে কয়েকবার অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। মেয়েটি স্বেচ্ছায় গাঁজা খেতে নিজেই নিয়ে এসেছিলেন। এরপর পুরোপুরি স্বেচ্ছায় তিনি ঘরের ভেতর সজিব তুষারের সঙ্গে প্রবেশ করেন। মেয়েটি তখন কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে দেননি।

মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার তরণী বলেন, ‘আমি প্রথমে পরিবারের মান-সম্মান ও সামাজিক অবস্থান চিন্তা করে মামলা করিনি। আমার পরিবারকে জানানোর পর তারাও মামলায় সম্মতি দেয়নি। পরে যখন দেখলাম আমাকে উল্টো দোষ দেওয়া হচ্ছে এবং একটি ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তখন আমার কাছে বেশি আঘাত লাগে। তখন পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি মামলা করি। সত্য জানানোর জন্য মামলা দেওয়া তখন জরুরি ছিল। আশা করছি, সঠিক বিচার পাবো এবং আসল সত্য বের হয়ে আসবে।’