করোনায় ছেলের মৃত্যু, ১২ ঘণ্টা পর চলে গেলেন মা

জ্বর, সর্দি, ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সোহেল বকস (৩২)। প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর চিকিৎসা নিতে গেলে দেখা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার। রবিবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা না যেতেই ছেলের শোকে স্ট্রোক করে মারা যান তার মা দোলবাহার বেগম (৬২)।

হৃদয়বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাঠানটুলা গ্রামে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসের শেষের দিকে জ্বর-সর্দি, ডায়েরিয়াসহ নানা উপসর্গ থাকার পরেও সোহেল বকস (৩২) অবহেলায় চিকিৎসা নেননি। মে মাসের মাঝামাঝি তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ভর্তি করা হয় মৌলভীবাজারের একটি হাসপাতালে। করোনা টেস্টে তার পজিটিভ আসে। তবে এরই মধ্যে ফুসফুসের ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। পরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে। সেখানে চিকিৎসার পর করোনা টেস্টে তার নেগেটিভ আসে। এর দুই-একদিনের মধ্যে পরিবারের অন্য সদস্যদের করোনা টেস্ট করালে তার বাবা, মা, ভাই ও ভাবির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

গত (২২ মে) শনিবার তার বাবা, মা, ভাই ও ভাবির করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু যত সময় যাচ্ছিলো তত সংকাটাপন্ন হচ্ছিলো সোহেল বকসের অবস্থা। তাকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে।

রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সিলেট উইমেনস মেডিক্যাল কলেজের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে সোহেলের মৃত্যুর খবরে উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোহেল বকস রাজনগর বাজারের বকস মোটরসের মালিক ছিলেন।

এদিকে ছেলের শোকে রাত পৌনে ৯ টার দিকে স্ট্রোক করে সোহেল বকসের মা দোলবাহার বেগম মারা গেছেন। একটি শোক সইবার আগেই আরেকটি শোকে পরিবারের সদস্যরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ১২ ঘণ্টার কম ব্যবধানে একই পরিবারের দুই জনের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনগর উপজেলায়। রাত তিনটার দিকে জানাজা শেষে তাকেও পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সোহেল বকসের চাচাতো ভাই মুস্তাকিম বকস শিমুল বলেন, চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবার শোকস্তব্ধ হয়েছিলো। সন্ধ্যায় চাচাতো ভাইয়ের দাফন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার চাচিও স্ট্রোক করেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো সুযোগও আমরা পাইনি।