‘সাহেব আর নেই, মনটারে বুঝাইতে পারতেছি না’

‘শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। সাহেবের মৃত্যুর খবর শুনে ঘুম ভাঙলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বারবার বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছিল। খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলেন। সবসময় আমাদের খবর নিতেন, সহযোগিতা করতেন। তার জন্য খুব যত্নে বড় করেছি বাগানের আমগাছগুলো। এবার গাছে আম এসেছে। কিন্তু কে খাবে। বাড়িটি একা করে চলে গেলেন সাহেব।’

এভাবেই কথাগুলো বলেছেন সদ্যপ্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সিলেটের বাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রহিম। শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে সিলেট নগরীর রায়নগরস্থ মুহিতের পৈতৃক নিবাসে তার সঙ্গে কথা হয়।

আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। কিন্তু সাহেবসহ তার ভাইয়েরা আমার পরিবারকে যেভাবে যত্ন করেন, তাতে মনে হয় আমার বাড়ি সিলেটে, আমরা তাদের আত্মীয়। প্রায় ১২ বছর ধরে সপরিবারে তাদের বাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করছি। নিজের ঘরের মতো তাদের ঘর ও বাড়ির ফলের বাগান দেখভাল করে আসছি।’ 

আরও পড়ুন: মুহিতকে নিয়ে মুক্তাদিরের ফেসবুক স্ট্যাটাস, সিলেটে সমালোচনার ঝড়

‘সাহেব বাড়ির ফল খুব পছন্দ করতেন’ জানিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর বাড়ির বাগানে আম, কাঁঠাল ও জামসহ কয়েক জাতের ফল ধরেছে। কিন্তু সাহেব নেই। কার লাগি বাগানের এত যত্ন করলাম; বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিম। 

তিনি আরও বলেন, সাহেব তিন বছর আগে একবার বাড়িতে এসে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে গেছেন। এরপর আর আসেননি। কারণ এরপর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। সাহেবের লাগি অনেক দোয়া করছি। কিন্তু সাহেব আর ফিরে এলেন না। মনটারে বুঝাইতে পারতেছি না, সাহেব আর নেই। মনটা ভেঙে গেলো। আল্লাহ সাহেবকে জান্নাতবাসী করুক।’

মুহিতের সিলেট নগরীর রায়নগরস্থ মুহিতের পৈতৃক নিবাস

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

আরও পড়ুন: মা-বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত হবেন মুহিত

জানা গেছে, রবিবার দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ নেওয়া হবে। দুপুর ২টার দিকে দরগাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে জানাজার নামাজের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেওয়া হবে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের লাশ। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেট নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পিতা-মাতা দুজনই তৎকালীন সিলেট জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ১০টিসহ মোট ১২টি বাজেট দিয়ে রেকর্ড করে গেছেন মুহিত। তিনি ভাষাসংগ্রামী ও রেকর্ডধারী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান সিলেটবাসী।

আরও পড়ুন: মুহিতের জানাজার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ