৯ জনকে হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক এমপি মজিদ খান

হবিগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মজিদ খানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৯ জনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছিল। 

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল আলীমের আদালতে মজিদ খানকে হাজির করা হয়। পুলিশ তাকে বানিয়াচং থানায় করা নয় জন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। পাশাপাশি আসামির পক্ষে কোনও আইনজীবী জামিন চাননি। আদালত দ্রুত শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হবিগঞ্জ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক শেখ নাজমুল হক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বানিয়াচং থানা পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর রাতেই হবিগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘সাবেক এমপি মজিদ খানকে সকালে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি নয় জন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, বানিয়াচংয়ে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নয় জন নিহত হন। এ ঘটনায় বানিয়াচং থানায় হত্যা মামলা করা হয়। 

নিহতরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলার পূর্বঘর গ্রামের সাদিকুর (৩০), কামালখানি মহল্লার আকিনুর মিয়া (৩২), যাত্রাপাশা মহল্লার হাসান মিয়া (১২), মাঝের মহল্লার আশরাফুল ইসলাম (১৭), পাড়াগাঁও মহল্লার মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালখানি মহল্লার নয়ন মিয়া (২০), যাতুকর্নপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল (১৮), খন্দকার মহল্লার আনাছ মিয়া (১৮) ও সাগরদিঘি এলাকার সোহেল আখঞ্জী (৩৫)। নিহত নয় জনের মধ্যে অন্যতম শিশু হাসান মিয়ার বাবা মো. ছানু মিয়া গত ২২ আগস্ট দুপুরে বানিয়াচং থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান। এ ছাড়া আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট দুপুরে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে জড়ো হন কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। তারা মিছিল নিয়ে বড়বাজার হয়ে থানার সামনের দিকে রওনা হন। পথে ঈদগাহ এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় জনসহ ৯ জন নিহত হন।

আইনজীবী মজিদ খান ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফের কাছে হেরে যান।