নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা

বেসরকারি নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখল নিতে চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রাস্টি লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন নিজেদের নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এর অংশ হিসেবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দফা হামলা-লুটপাটও চালান। তারা বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের হুমকি-ধমকির মধ্যে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড আয়ত্তে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিতে সাবেক এই ট্রাস্টি সদস্যরা সুপরিকল্পিত একটি ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন। সিন্ডিকেটটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই-একজন কর্মকর্তাকে কাজে লাগাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

অভিযোগে জানা গেছে, এই ঘটনায় ইউজিসি তদন্ত কমিটি করেন। কিন্তু আপত্তির মুখে সেই কমিটি বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ফের কমিটি করা হয়। কিন্তু এই কমিটির বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। 

শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় ব্যক্তির অশুভ তৎপরতার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেও অভিযোগ করা হয়। 

গত ৫ আগস্টের পর নিজেদের ট্রাস্টি পরিচয় দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল ফিরে নিতে আবেদন করেন লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দীন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। সেই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুনরায় তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি করা হয়। নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যের অভিযোগ, এ তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো হয়েছে। এতে লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিনের হাত রয়েছে। 

প্রথম দফার বিতর্কের পর দ্বিতীয় দফায় গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আলতাফ হোসেনকে। 

গত ২৯ এপ্রিল তার প্রতি তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নর্দার্নের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে তারা উচ্চ আদালতে এ নিয়ে রিট করেন।

জানা গেছে, নর্দার্ন ইউানভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক কয়েকজন সদস্য ২০১১ সালে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এবং আর্থিক সংকটে পড়লে তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য আইন অনুযায়ী পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন। পরবর্তী সময়ে গঠিত নতুন ট্রাস্টি বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতন হলে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে দু-দিন পরই নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ট্রাস্টি বোরহান উদ্দিন ও লুৎফর রহমান সানির নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। তারা উপাচার্যকে জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বোরহান উদ্দীন ও লুৎফর রহমানকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

কিছুদিন পরই বনানীর প্রাসাদ ট্রেড সেন্টারে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। অফিসে সেদিন লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। অন্যদিকে একই সময়ে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানসহ ট্রাস্টি বোর্ডের প্রায় সবাইকে আসামি করে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিতে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সামসুল হকের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের জাল দলিলে সই করানোর অপচেষ্টাও চালানো হয়। এ ঘটনায় বনানী থানায় অভিযোগও করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালটির বর্তমান রেজিস্ট্রার মোস্তফা বলেন, ‘নর্দার্ন ভার্সিটি প্রতিষ্ঠালগ্নে আইবিএটি ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী আমানত দেখিয়ে প্রচুর ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়, যা ট্রাস্টিরা ভাগ করে নেন। ২০১০ সালে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরি করে। তখন স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আগের ট্রাস্টিরা বিনিয়োগে ব্যর্থ হন। পরে ২০১১ সালের ২৭ জুলাই বোরহান উদ্দিন, লুৎফর রহমান পদত্যাগ করেন এবং তারা তাদের প্রাপ্য হিস্যা নিয়ে যান। যার রেকর্ডও আছে। একই সঙ্গে অধ্যাপক ইউসুফ আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দায়-ঋণ পরিশোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রাস্টি অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন জানান, দায়-দেনা পরিশোধ না করে ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। যার সব সদস্যই তার নিকটাত্মীয়। এরপর পুরোনো ট্রাস্টিদের বের করে তিনি প্রতিষ্ঠানটি দখল করেন।
হামলা-লুটপাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকেছিল। আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। পরে তারা সেনাবাহিনী ডেকে আমাদের তাদের হাতে তুলে দেয়। আমরা কোনও হামলা-লুটপাট করিনি। অথচ তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, জেলে পাঠিয়েছে।’

তবে বোরহান উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকার তথ্য ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাদের দাবি, তিনি স্বপ্রণোদিত হয়েই নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেন।