সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একই বিষয়ে পর পর দু’দিন দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর বিষয় উল্লেখ করে মামুনুর রশীদ শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। অনুদান বিতর্ককে চাপা দেওয়ার জন্য এবং আমরা যারা কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি তাদের মানহানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির মন্তব্যসহ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিউজ পাঠানো হলো গণমাধ্যমে! এবং সেসব বক্তব্য খুবই অশোভন ভাষায় লেখা! যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মকাণ্ডে আমি খুবই হতাশ।’
বলে রাখা দরকার, ২৪ এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নাম। জানানো হয়, একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র, দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র এবং ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হয়েছে এবার।
তালিকাটি প্রকাশের পর থেকে একাধিক অনুদান প্রত্যাশী এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রকাশ করেন অনিয়মের নথি।
অন্যদিকে অনুদান কমিটির অন্যতম চার সদস্যকে ওয়াকিবহাল না করে এই তালিকা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, খ্যাতিমান নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম ও মতিন রহমান।
গত ২৮ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
মূলত এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে পদত্যাগকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন নন্দিত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ও নির্মাতা সারাহ বেগম কবরী ও নাট্যজন ড. ইনামুল হক। তারা দুজনই এবার অনুদান পাচ্ছেন।
তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো কবরীর এমন মন্তব্যে মর্মাহত হয়েছেন অনুদান কমিটির চার পদত্যাগী। যারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নিজেদের অবদান রেখে চলেছেন অসামান্য।
এদিকে একই ইস্যুতে ২ মে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সকল সদস্য তাদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখছেন। যে চারজন সদস্য পদত্যাগ করার কথা বলছিলেন, বুধবার (১ মে) রাতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে আরও ছিলেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক। উক্ত বৈঠকে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয় এবং পদত্যাগ করা চার সদস্য কমিটিতে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে মন্ত্রীকে জানান।
এর সত্যতা জানতে বাংলা ট্রিবিউন-এর পক্ষ থেকে শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে আলাপ হয় মামুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়টি ঠিকই আছে। মন্ত্রী ডেকেছেন, আমরাও গিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে প্রেস রিলিজ পাঠানো হলো আপনাদের কাছে, সেটা মনে হয় পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, বৈঠকে আমরা অনেক আলাপ করেছি। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কারণ, এসব বিষয়ে এখন আর স্বচ্ছতার কোনও বিকল্প নেই। স্বচ্ছতাহীন কমিটিতে থাকারও কোনও মানে নেই। আমি আমার সারা জীবনের অর্জন নষ্ট করতে পারবো না অস্বচ্ছ কোনও কাজ করে। তবে বৈঠক শেষে আমরা চারজনই মন্ত্রীর কাছ থেকে সময় চেয়েছি। বলেছি, আমরা পুরো বিষয়টি আরেকটু অবজার্ভ করি। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবো। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো আমরা বৈঠক করে কমিটিতে বহাল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আমি সত্যিই মন্ত্রণালয়ের এসব তড়িঘড়ি কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড হতাশ।’
এর আগে অনুদান প্রত্যাশী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন অনুদান প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে ২৫ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘হীরালাল সেন’ সকল শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও তিনি অনুদান পাননি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান না পাওয়ার এ ঘটনা প্রমাণ করে প্রক্রিয়াটিতে ঝামেলা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও তার চলচ্চিত্র অনুদানের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করলেও সে বছর তাকে অনুদান দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:
সরকারি অনুদান পাচ্ছেন ৮ নির্মাতা