এতে আগের আটটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে অভিনেত্রী শমী কায়সার প্রস্তাবিত ‘স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রটিও অনুদান তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের প্রস্তাবিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হীরালাল সেন’ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও বাদই রইলো তালিকা থেকে!
সব মিলিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো মোট নয়টি।
এর আগে ২৪ এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নাম। জানানো হয়, একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র, দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র এবং ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে এবার।
তালিকাটি প্রকাশের পর থেকে একাধিক অনুদান প্রত্যাশী এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রকাশ করেন অনিয়মের নথি।
অন্যদিকে অনুদান কমিটির অন্যতম চার সদস্যকে ওয়াকিবহাল না করে এই তালিকা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, খ্যাতিমান নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম ও মতিন রহমান।
গত ২৮ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
এরপর দফায় দফায় বৈঠকের পর এ সমস্যার সুরাহা হলো ১৪ মে। এ দিনের বৈঠকে যোগ করা হলো শমী কায়সারের ছবিটি।
পদত্যাগকারী নাট্যজন মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় ছিলাম। পুরো বিষয়টির একটা সুরাহা হয়েছে। আমরা পুনরায় কমিটিতে ফিরেছি। বিষয়গুলো নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না। আমি শুধু এটুকই বলবো।’
অনুদান নিয়ে শমী কায়সার ইস্যুতে নতুন বিতর্কের কোনও জবাব দিতে চাননি এই নাট্যজন।
এদিকে নানা বিতর্কের পরেও শমী কায়সারের ছবি নতুন করে অনুদানের জন্য সংযুক্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে নানা প্রতিক্রিয়া। এরমধ্যে নির্মাতা মাহমুদ দিদার প্রতিবাদ করেন এভাবে, ‘শমী কায়সার অভিনেত্রী ছিলেন, ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর একজন নির্বাচিত নেত্রীও। অর্থকড়ির অভাব কি খুব তার? সিনেমা বানানোর জন্যে সরকার তাকে ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিলো! বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের নেকি হাসিল হলো।’
বলে রাখা সঙ্গত, এই নির্মাতা নিজেও সরকারের অনুদান নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ করছেন গেল দুই বছর ধরে। জয়া আহসান অভিনীত ‘বিউটি সার্কাস’ নামের এই চলচ্চিত্রটি অনুদান পায় মাত্র ৩৫ লাখ টাকা। অথচ এর প্রাথমিক ব্যয় প্রায় দুই কোটি টাকা বলে দাবি করলেন মাহমুদ দিদার। যে ছবিটি করতে গিয়ে তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন বলেও ব্যাখ্যা করেন।
অনুদান নিয়ে নতুন বিতর্কের বিপরীতে শমী কায়সারের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে পদত্যাগকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন নন্দিত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ও নির্মাতা সারাহ বেগম কবরী ও নাট্যজন ড. ইনামুল হক। তারা দুজনই এবার অনুদান পাচ্ছেন।
তবে এ বিষয়ে তখন মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনুদান বিতর্ককে চাপা দেওয়ার জন্য এবং আমরা যারা কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি তাদের মানহানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির মন্তব্যসহ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিউজ পাঠানো হলো গণমাধ্যমে! এবং সেসব বক্তব্য খুবই অশোভন ভাষায় লেখা! যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মকাণ্ডে আমি খুবই হতাশ।’
এরপরই তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ পদত্যাগকারীদের নিয়ে বৈঠক করেন। সমস্যা সমাধানে এগিয়েই আসেন দুই পক্ষই।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৪ মে) তথ্যসচিব আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, মতিন রহমান, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান উল আলম অনুদান বিষয়ে শেষ সভায় বসেন। তাদের সর্বসম্মতিতে মোট নয়টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এর আগে এ বছর অনুদান প্রত্যাশী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন অনুদান প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে ২৫ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘হীরালাল সেন’ সকল শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও তিনি অনুদান পাননি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান না পাওয়ার এ ঘটনা প্রমাণ করে প্রক্রিয়াটিতে ঝামেলা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও তার চলচ্চিত্র অনুদানের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করলেও সে বছর তাকে অনুদান দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:
সরকারি অনুদান পাচ্ছেন ৮ নির্মাতা
চলচ্চিত্র অনুদানে অনিয়ম, কমিটির চার সদস্যের পদত্যাগ