পূজা উৎসব: তারকারা কে কোথায় কীভাবে কাটাচ্ছেন

মিম, বাপ্পি-অপু, বাপ্পা, জ্যোতি ও পূজাচলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন দুর্গা পূজা। ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে মা দুর্গাকে বরণ ও প্রস্থানের নানা ব্যঞ্জনা! শোবিজের সনাতন ধর্মাবলম্বী তারকারা এবারের উৎসবেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে করোনাকাল হওয়ায় সীমিত আকারে পালন করছেন এই আয়োজন। কে, কোথায়, কীভাবে কাটাচ্ছেন সেই পর্বে কথা বলেছেন তারকা—

অপু বিশ্বাস

এবারের পূজাটা আমার জন্য একেবারে অন্যরকম, বিষণ্ণ। এই সময়টায় মাকে (শেফালী বিশ্বাস) নিয়ে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঘুরতাম। অষ্টমীর দিন মা আর আমি একই রকম পোশাক পরতাম। মা কাশফুল ভীষণ পছন্দ করতেন। এর ফাঁকেই আমরা কাশবনেও যেতাম। পূজায় মায়ের ব্যস্ততা বেশি থাকতো। তিনি সব সামলে দিতেন। এবার মা নেই, আমার সবকিছু একেবারে এলোমেলো। তাই পূজার তেমন কোনও প্রস্তুতিও নেই। এবার ছেলেকে নিয়ে কয়েকটি মণ্ডপে গিয়েছি। আর তার জন্য পোশাক কিনেছি। এটুকুই।
বিদ্যা সিনহা মিম
ঢাকাতেই আছি। করোনার কারণে এবার আর গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে যাওয়া হলো না। প্রতিবছরই পূজার সময়টা একছুটে চলে যেতাম গ্রামে। সেখানে বিশাল নৌকা বাইচ হয়। এটা খুব মিস করি। আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বেশ আনন্দ করে পূজার উৎসব পালন করতাম। এবার বাসায় বসে পূজার আনন্দ যতটুকু করা যায় করবো।
তবে মজার বিষয়, এবারও পূজা আনন্দে বেশ টইটুম্বুর। কারণ, একগাদা উপহার পেয়েছি। জামদানি শাড়ি পেয়েছি পাঁচটা। কামিজ পেয়েছি দশটা। মা-বাবাও উপহার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রচুর উপহার পেয়েছি! মনে হচ্ছে আগামী তিন-চার পূজা এগুলো দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যাবে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে অষ্টমী ও নবমীতে মণ্ডপে গিয়েছিলাম।
পূজা নিয়ে সবাইকে একটা কথা বলতে চাই। এবারের পূজা আলাদা। করোনা এখনও যায়নি। তাই আপনারা যারা মণ্ডপে যাবেন, অবশ্যই মাস্ক পরবেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখবেন এবং দূরত্ব মেনে চলবেন। শারদীয় বার্তা পৌঁছে যাক সবার ঘরে ঘরে।
বাপ্পা মজুমদার
পরী তো ডিসেম্বরে হলো। তার তো এবারের পূজায় উড়ে বেড়ানোর কথা। ভেবেছিলাম বাবা হিসেবে সঙ্গী হবো। ঘুরে বেড়াবো মণ্ডপে মণ্ডপে। কিন্তু পরিস্থিতি সহায় হলো না। তাই এবারের পূজায় একেবারে ঘরেই থেকে গেছি। কোথাও কোনও অনুষ্ঠান বা মণ্ডপে একদম বের হইনি। পরী না থাকলে হয়তো একটু সাহস করে বাইরে পা ফেলতাম। কিন্তু সে তো ছোট, তাই এটা করিনি।
দশমীর দিন বাসায় ছোট পরিসরে আয়োজন রেখেছি। মানে আমার পরিচিতজন দু’একজন আসবেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আড্ডা দেবো। পূজার রান্না হবে। সেটাই আয়েশ করে হয়তো খাবো। কিন্তু একটু আফসোস থাকবে বাইরে যাওয়া হলো না। অনেকেই মাস্ক পরে যেতে বলছেন, কিন্তু যাইনি। মেয়েকে প্রথম পূজায় মা দুর্গাকে দর্শন করাতে পারলাম না। তাই বাবা হিসেবে খারাপ লাগছে।
জ্যোতিকা জ্যোতি
আমি এখন ময়মনসিংহে আছি। সবাই পূজা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ব্যস্ত আমিও। তবে এর সঙ্গে আরও একটা বিষয় যুক্ত হয়েছে—আমার কৃষি কাজ। ভোর থেকে ময়মনসিংহের মাছের আড়তে আড়তে ঢুঁ দিলাম। টনকে টন মাছ ঢাকায় যাচ্ছে। আফসোস একটাই—দেশি মাছ নাই। সব মিশিয়ে দিচ্ছে। এখান থেকে সবজি যাচ্ছে, তবে সব সার দিয়ে চাষ করা। ঢাকা আর এখানে কোনও পার্থক্য নাই। ঢাকার মানুষের খাবার-দাবার নিয়ে কিঞ্চিত চিন্তা হচ্ছে (হাসি)।
সামনের মাস থেকে এই মাছ-মুরগি নিয়ে মাঠে নামবো। তাই পূজা ও কৃষি নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল দৌড়ের মধ্যে আছি। তবে এরমধ্যেই মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছি।
অষ্টমীতে অঞ্জলি দিয়ে এলাম। আজ দশমীর দিন গৌরীপুরে আমার গ্রামে যাবো। সেখানে আমার মা-বাবা আছেন। আর আমার খামার আছে।
বাপ্পি চৌধুরী
টানা শুটিংয়ে ব্যস্ত। তবে পূজার আনন্দ মিস করছি না। সারাদিন শুটিং করি, আর মধ্য রাতের পর বেরিয়ে পড়ি। অভিনয়ে আসার পর আমি সাধারণত মণ্ডপে যাই রাত দুইটার পর। এ সময় লোকসমাগম কম থাকে। তবে দশমীর দিন (২৬ অক্টোবর) অনেক বেশি আনন্দ করতে চাই। নারায়ণগঞ্জ যাবো। মাস্ক পরে আনন্দে মেতে উঠবো বন্ধু আর পরিবারের সঙ্গে।
এটা ঠিক, ছোটবেলার পূজার আনন্দটা এখন আর করতে পারি না। মনে পড়ে, সারা রাত নাচতাম, ভোরে বাসায় ফিরতাম। এভাবে চলতো টানা চার দিন। আমাদের সেই উৎসব শুধু নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ থাকতো না, বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম নরসিংদী। সেই দিনগুলো আর ফিরে পাবো না, ভাবতেই জীবনটা অর্থহীন মনে হয়।
সবাই শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই। সবাই নিরাপদে থাকবেন।
পূজা চেরি
এবারের পূজায় আমার একদমই প্রস্তুতি নেই। কারণ করোনা। ছয় মাস আগেও বাসায় যেভাবে থাকতাম, পূজাটাও সেভাবে কাটাতে হচ্ছে। তবে ছোটবেলার পূজাটা খুব মিস করছি। যদিও বলা যায়, আমি এখনও ছোট। আরও ছোটবেলার কথা বলছি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে আমাদের উঠোনে (খুলনায়) সবচেয়ে বড় মণ্ডপ হতো। মা দুর্গার সঙ্গে থাকতেন গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীসহ অনেক দেব-দেবী। এই বিষয়টা ভীষণ ভালো লাগতো। মনে হতো, এত এত দেবতা আমাদের বাড়িতে এসেছেন।
আবার যখন একটু বড় হলাম, মিডিয়ায় কাজ শুরু করলাম, তখনও ঢাকার মণ্ডপগুলোতে যেতে ভীষণ পছন্দ করতাম। অনেকে চিনতে পারতেন, অনেকে পরে চিনতেন। এক পা এগিয়ে এসেও দু’পা পিছিয়ে যেতেন। এটা খারাপ লাগে না। কারণ, আমি চাইতাম লোকজন অল্প হলেও আমাকে যেন চেনেন।
এবারের পূজায় গ্রাম ও শহরের এ দুটি জিনিসই মিস করেছি। হয়তো আগামী পূজায় এমনটা হবে না। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।