শতবর্ষে সত্যজিৎ

চলচ্চিত্রের জন্য স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখেছিলেন সত্যজিৎ, করেছেন চাকরিও

সত্যজিৎ রায়ের পরিচয় একটি বা দু’টি শব্দে তুলে ধরাটা অসম্ভব। কারণ, একাধারে তিনি পরিচালক, সাহিত্যিক, সুরকার, চিত্রশিল্পী, প্রচ্ছদশিল্পী, সংগীতকার। তার জীবন ছিল বর্ণাঢ্য।

১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমার-এর হয়ে চাকরি দিয়ে তার পেশাদার জীবনের সূত্রপাত। আবার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’র জন্য নিজের জীবন বিমা ভেঙেছিলেন। স্ত্রীর গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন সত্যজিৎ। চলচ্চিত্রের জন্য এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন এই কিংবদন্তি। তেমন কিছু অজানা তথ্য নিয়ে থাকছে এ আয়োজন-

শুরুটা ঠাকুরদাদার কাঠের বাক্স থেকে
ঠাকুরদাদার শূন্য কাজের ঘর থেকে একটি কাঠের বাক্স পেয়েছিল ছেলেটি। সেখানে থাকত ঠাকুরদাদার রং, তুলি আর তেলরঙের কাজে ব্যবহারের জন্য লিনসিড অয়েলের শিশি। উত্তরাধিকারের সেই ধারা পরবর্তীকালে প্রজন্মজয়ী হয়েছিল বালকের হাত ধরেই। ১০০, গড়পার রোড, কলকাতার বাড়ি থেকে।

মানিক থেকে যেভাবে সত্যজিৎ
এই গড়পার রোডের বাড়িতেই তার জন্ম, ১৯২১-এর ২ মে। মায়ের আদরের সেই ‘মানিক’-এর ভালো নাম প্রথমে যা রাখা হয়েছিল, পছন্দ হয়নি বাবার। পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় ‘সত্যজিৎ’।

চাকরি জীবন
১৯৪৩ সালে প্রথম চাকরি, নামি ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ভিজ্যুয়ালাইজার হিসেবে বেতন ছিল ৮০ টাকা। কিন্তু জনঅরণ্যে নিছক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে চাকরি করা তাঁর ছিল অপছন্দ।
তবু সৃষ্টিশীলতা আর উপার্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চাকরি করেছিলেন বেশ কয়েক বছর। তার জীবনে নতুন দরজা খুলে দিয়েছিল সিগনেট প্রেসের চাকরি। সেখানে কাজ ছিল বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার।

কে ফেলুদা
ফেলুভক্তদের অনেকের মতে, ফেলুদা আসলে স্বয়ং সত্যজিৎই। দু’জনেই শৈশবে পিতৃহীন।

স্ত্রীর গয়না বন্ধক
নিজের সৃষ্টি ‌‘পথের পাঁচালী’র জন্য জীবন বিমা বিক্রি ও স্ত্রীর গয়না বন্ধক করেছিলেন তিনি।

জাতীয় পুরস্কারই পেয়েছিলেন ৩২টি
শুধু সৃষ্টিই নয়, পুরস্কারেও অনবদ্য ছিলেন সত্যজিৎ। চলচ্চিত্রের জন্য ৩২ বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৬১ সালে তার নির্মিত সব ছবিই পুরস্কার পেয়েছিল। শুধু পরিচালকই নয়, কাহিনিকার, সংলাপ, প্রচ্ছদ এমনকি সংগীত পরিচালক হিসেবেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন সত্যজিৎ।

ডক্টরেট ডিগ্রি
প্রিয় অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের পর তিনি অক্সফোর্ড থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেন। যা বাঙালি হিসেবে আরেক মাইলফলক ছিল।

সাদাকালোর যুগেই আনেন টিজার প্রথা
বর্তমানে জনপ্রিয় পাওয়া টিজার প্রকাশের বিষয়টি সত্যজিৎ ‘১৯৫৫’ সালেই করেছিলেন। ‘পথের পাঁচালী’ প্রচারণার জন্য প্রকাশ করেছিলেন টিজার।

নিষিদ্ধ সত্যজিৎ
নিষিদ্ধ হওয়ার তালিকায় ছিল সত্যজিতের নামও! তার তৈরি ‘সিকিম’ (১৯৭১) তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। সিকিম রাজ্য ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় ১৯৭৫ সালে এটি করা হয়। যা ২০১০ সালে তুলেও নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অস্কার
তিনিই প্রথম ভারতীয় ও বাঙালি হিসেবে অস্কার পেয়েছেন। তার এই প্রাপ্তির ভিডিওটি কলকাতায় ধারণ করা হয়। কারণ, তিনি সে সময় বেশ অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি ১৯৯২ সালে অস্কার গ্রহণ করেন। এবং সেই ভিডিও অস্কার অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়েছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়ান, আনন্দবাজার