উপমহাদেশের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম জানতে চাওয়া হলে প্রায় সকলের মুখে যে নামটি প্রথমে উচ্চারিত হবে, তা সত্যজিৎ রায়। বাংলা চলচ্চিত্রকে যিনি নতুন দিগন্তের দিশা দিয়েছিলেন, নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। সম্মানজনক অস্কার জয়ের অসামান্য কীর্তিও রয়েছে তার দখলে। সত্যজিতের নির্মিত সিনেমা, লিখে যাওয়া গল্প এই যুগের নির্মাতাদের কাছেও পাঠ্য সিলেবাসের মতো।
নন্দিত এই চলচ্চিত্রকারের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন তিনি। বিষাদময় দিনটিতে তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি তথ্য জেনে নেওয়া যাক...
এক.
সিনেমায় আসার আগে কলকাতার সিগনেট প্রেসে বইয়ের প্রচ্ছদ ইলাস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেখানে দুটি অসামান্য বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছিলেন তিনি। একটি হলো জিম করবেটের ‘ম্যানইটারস অব কুমায়ুন’; অন্যটি জওহরলাল নেহেরুর ‘ডিসকভার অব ইন্ডিয়া’।
দুই.
ক্যালিগ্রাফিতে সত্যজিৎ রায়ের দক্ষতার কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু তার হাতে তৈরি রোমান ফন্টের কথা জানেন কি? চারটি রোমান ফন্ট ডিজাইনের পিছনেও রয়েছে সত্যজিতের কৃতিত্ব। ভারতীয় মোটিফ ও ক্যালিগ্রাফি দিয়ে তৈরি সেই ফন্টগুলির নাম রে রোমান, রে বিজার, ড্যাফনিস ও হলিডে স্ক্রিপ্ট।
তিন.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘ঘরে বাইরে’ অবলম্বনে সিনেমা বানানোর জন্য চিত্রনাট্যও প্রস্তুত করেছিলেন সত্যজিৎ। সেটা ১৯৪৮ সালের কথা। হরিসাধন দাশের সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমাটি করার কথা ছিল। কিন্তু প্রযোজক চিত্রনাট্যের এক জায়গায় পরিবর্তন করতে বলেন। তাতে রাজি হননি সত্যজিৎ। ফলে ছবিটিও আর নির্মিত হয়নি।
চার.
ভারতীয় সিনেমায় টিজারের প্রচলন করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তির আগে একটি টিজারের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। সেটাকেই ভারতের সিনেমায় প্রথম টিজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পাঁচ.
১৯৬৪ সালে তিনি ‘চারুলতা’ পরিচালনা করেন। এই সিনেমা নিয়ে তার একটি কথা এখনও বিখ্যাত। তিনি বলেছিলেন, ‘কখনও এই সিনেমা দ্বিতীয়বার বানাতে হলে এই একইভাবে বানাব’।
ছয়.
১৯৬১ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে ছোটদের পত্রিকা ‘সন্দেশ’ সম্পাদনা শুরু করেন সত্যজিৎ। কিন্তু তার বাবা সুকুমার রায়ের মৃত্যুর কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
সাত.
সত্যজিৎ রায়ের প্রথম রঙিন সিনেমা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। নিজের লেখা গল্প থেকেই ছবির চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন তিনি। এটি মুক্তি পায় ১৯৬২ সালে।
আট.
১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জন্য একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন। সেই তথ্যচিত্রটি ছিল সত্যজিতের বাবা অর্থাৎ সুকুমার রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে।
নয়.
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিনোদন জগতের মানুষ হিসেবে প্রথম ডক্টরেট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই অনন্য প্রাপ্তির নজির গড়েন সত্যজিৎ রায়। ১৯৭৮ সালে তাকে ডক্টোরেট প্রদান করা হয়েছিল।
দশ.
বহু গুণের পাশাপাশি সংগীতেও দক্ষ ছিলেন সত্যজিৎ রায়। নিজের সবগুলো ছবির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন তিনি। এর বাইরে জেমস আইভরি নির্মিত সিনেমা ‘শেক্সপিয়ার ওয়াল্লা’র সংগীত পরিচালনাও করেছিলেন এই কিংবদন্তি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস