সত্যজিতের তাড়িণীখুড়ো এবার বলিউডে

সত্যজিৎ রায়ের আইকনিক চরিত্র তাড়িণীখুড়ো ওরফে তাড়িণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স্ক ব্যাচেলর। কলেজ স্ট্রিটের বেনিয়াটোলা লেনে বাস। খুড়োর কাছে গল্পের যা সম্ভার, তা দিব্যি আরব্য রজনীকেও হার মানাবে! তবে গল্প করার ফাঁকে তার একটাই আবদার- চা চাই। এমন চরিত্রকে ভুলতে পারে, বাঙালি সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া ভার। 

সত্যজিৎ রায়ের সেই তাড়িণীখুড়োই এবার বলিউডে চললেন গল্প শোনাতে। আর সেই আইকনিক চরিত্রে দেখা যাবে বলিউডের তুখোড় অভিনেতা পরেশ রাওয়ালকে। মাস দুয়েক আগে যখন কলকাতায় শুটিং করতে গিয়েছিলেন, তখনই সন্দেহটা জন্ম নিয়েছিলো। তবে এবার সেই জল্পনায় সিলমোহর বসালেন নির্মাতারা।

সোমবারই (২৩ মে) জিও স্টুডিও, পার্পাস এন্টারটেইনমেন্ট ও কোয়েস্ট ফিল্মস-এর তরফে যৌথ উদ্যোগে বহু প্রতীক্ষিত এই সিনেমার ঘোষণা করা হয়েছে। ছবির নাম- ‘দ্য স্টোরিটেলার’। পরিচালক অনন্ত মহাদেবন। 

ইতিমধ্যেই এই ছবির কিছু অংশের কাজ হয়েছে কলকাতায়। চলতি বছরের মার্চ মাসে কুমোরটুলি, কলেজ স্ট্রিট এমনকী লেক মার্কেটের বেশ কিছু অংশে শুটিং করে গিয়েছেন পরেশ। পরনে মেরুন পাঞ্জাবি, পাকা দাঁড়ি, কালো রঙের মোটা ফ্রেমের চশমায় আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানায় ভরপুর পরেশকে প্রথমদিকে চেনাই দায় হয়ে উঠেছিল তাড়িণীখুড়োর আদলে।

সত্যজিতের তৈরি এই গল্পগাছা এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলো- ‘গল্প নাকি গল্প-বলিয়ে, কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কাজের সূত্রে ঘুরে-বেড়ানো তাড়িণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে উপচে পড়া গল্পের সম্ভার আর তার অতিরঞ্জিত বলনের ধরণ বহু শিশুমনে প্রশ্ন জাগিয়েছিল। অনন্ত মহাদেবনের ফ্রেমেও যে সেই আমেজ পাওয়া যাবে, তা আগেভাগেই জানিয়েছিলেন পরিচালক। শুধু তাই নয়, সত্যজিতের জন্মশতবর্ষকে ঘিরে তার এই গল্পকে নবীন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতেই এই প্রয়াস। পোস্টারেও সবার ওপরে সত্যজিৎ রায়ের নাম লেখা থাকবে বলেও জানান অনন্ত।

তবে কাস্টিংয়ে রয়েছে আরও চমক। পরেশ রাওয়ালের পাশাপাশি ‘দ্য স্টোরিটেলার’ ছবিতে দেখা যাবে আদিল হুসাইন, রেবতী ও তান্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়কেও।

‘তাড়িণীখুড়োর কীর্তিকলাপ’ সত্যজিৎ রায়ের লেখা একটি বই, যেখানে তারিণীখুড়োর আটটি গল্প সংকলিত হয়েছে। বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে।

এরপর ‘যেখানে ভূতের ভয়’ (২০১২) নামে তাড়িণীখুড়োর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় প্রথম চলচ্চিত্র। যা সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় টলিউডে। এই সিনেমাটি সত্যজিতের তিনটি গল্পের সমন্বয়ে নির্মাণ করেন তারই ছেলে। তবে তারও আগে ১৯৯৭ সালে নির্মাণ হয় টেলিছবি ‘জুটি’। সেখানে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় তারিণীখুড়োর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস