দিল্লিতেও বইছে বাংলাদেশের ‘হাওয়া’, সিনেমা হলে মুক্তির দাবি 

দুই বাংলাতেই তুমুল সাড়া ফেলা চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ এবার ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও প্রদর্শিত হবে। দিল্লির বুকে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে আগামী মাসে ছবিটির স্ক্রিনিং হবে বলে চূড়ান্ত হয়েছে। 

‘হাওয়া’র দুই নেতা চঞ্চল চৌধুরী ও মেজবাউর রহমান এই উপলক্ষে দিল্লিতে আসছেন বলেও উদ্যোক্তারা নিশ্চিত করেছেন।  

গত বছর বাংলাদেশে হইচই ফেলে মুক্তি পাওয়ার পর ‘হাওয়া’ যখন অক্টোবরে কলকাতায় আসে, তখন নন্দনে সেই শো-র একটা টিকিটের জন্য প্রায় মাইলখানেক লম্বা লাইন পড়েছিল। বাংলাদেশের কোনও একটি ছবিকে ঘিরে ভারতে এতটা মাতামাতি স্মরণকালের মধ্যে আর দেখা যায়নি। 

হাওয়া ছবিতে ‘চান মাঝি’র ভূমিকায় অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী আগে থেকেই কলকাতাতেও জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু ‘হাওয়া’র পর এপার বাংলাতে তার তারকা খ্যাতি তুঙ্গে পৌঁছেছে। দিল্লিতেও তার অনুগামীর সংখ্যা কম নয়, তারাও এবার সরাসরি বড় পর্দায় তার ছবি দেখার ও তারকার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ পাবেন।  

দিল্লিতে ‘হাওয়া’ যে উৎসবের অংশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, সেটির নাম ‘ইন্দো-বাংলা মুভি ফেস্টিভ্যাল’। কোভিডের জন্য মাঝে বছর তিনেক বন্ধ থাকার পর দিল্লির মর্যাদাব্যঞ্জক সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে এই চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ সংস্করণ অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির ৩ থেকে ৫ তারিখ।  

আর তিন দিনের এই উৎসবের শেষ দিনেই (৫ ফেব্রুয়ারি) উৎসবের প্রথম শো ‘হাওয়া’, যার জন্য দিল্লির বাঙালি ও অবাঙালিরা পর্যন্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।  

দিল্লির এই সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামেই দেখানো হবে ‘হাওয়া’ তবে ‘হাওয়া’র একটা টিকিটের জন্য কলকাতায় যেমন লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল, দিল্লিতে অবশ্য সে দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে না। তার কারণ, এই উৎসবে কোনও শো’রই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না, বরং অতিথিদের প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে পুরোপুরি আমন্ত্রণের ভিত্তিতে।  

ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর আশিস রঞ্জন দাস অবশ্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘‘আমরা সবচেয়ে বেশি অনুরোধ পাচ্ছি ‘হাওয়া’র আমন্ত্রণপত্রর জন্যই। বস্তুত ফেস্টিভ্যালের সূচি ঘোষণা করার দুদিনের মধ্যেই ছবিটির জন্য নির্ধারিত সব সিট ‘বুকড’ হয়ে গেছে।’’ 

‘হাওয়া’র জন্য এখনও দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে অনুরোধ এসেই চলেছে, কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ ইতোমধ্যে ‘হাউজফুল’ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা তাদের নিরাশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে উৎসবে ‘হাওয়া’র দ্বিতীয় একটি স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব কিনা তারও চেষ্টা চলছে। 

দিল্লির ইন্দো-বাংলা মুভি ফেস্টিভ্যালে ‘হাওয়া’ ছাড়াও এবারে অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’, মঞ্জুল বড়ুয়ার ‘অনুর’, পরিচালক গৌতম ঘোষের ‘রাহগির’ ও তথ্যচিত্র ‘রে’, কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি ‘লক্ষ্মী ছেলে’, কমলেশ্বর মুখার্জির ছবি ‘অনুসন্ধান’, ঈশান ঘোষের পরিচালিত ‘ঝিল্লি’ ও রিমা দাশের ছবি ‘বুলবুল ক্যান সিং’-ও প্রদর্শিত হবে। 

তবে সবচেয়ে মাতামাতি যে বাংলাদেশের ‘হাওয়া’কে ঘিরেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

উৎসবে চঞ্চল চৌধুরী ও মেজবাউর রহমান সুমন ছাড়াও কলকাতার পরিচালক অনীক দত্ত, কৌশিক গাঙ্গুলি, কমলেশ্বর মুখার্জিরা উপস্থিত থাকবেন। পরিচালক গৌতম ঘোষকে ভূষিত করা হবে বিশেষ লাইফটাইম সম্মানে। থাকবেন অভিনেতা আদিল হুসেন, রজত কাপুর, পায়েল সরকারও। নিজেদের ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর পরিচালক-অভিনেতারা দর্শকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বেও যোগ দেবেন, ‘হাওয়া’র ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।   

দিল্লিতে এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটি আয়োজনে সহযোগিতা করছে ‘পার্পল টাচ ক্রিয়েটিভস’ ও ‘প্রভাস কল্যাণী প্রীতি ট্রাস্ট’ নামে দুটি সংস্থা।  

উৎসবের সূচিতবে দিল্লিতে বাংলা চলচ্চিত্রের অনুরাগীরা প্রায় একবাক্যে বলছেন, একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এক-আধটা বাংলাদেশি ফিল্ম দেখার সুযোগ পেয়ে তাদের আশ মিটছে না। 

চিত্তরঞ্জন পার্কের সিনেমাপ্রেমী অমরেশ চৌধুরীর কথায়, ‘‘শুধু ‘হাওয়া’ কেন, বাংলাদেশে আজকাল কত ভালো ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেগুলো আর কতজন দেখার সুযোগ পাচ্ছেন? আমি ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, বন্ধুদেশ বাংলাদেশের ছবি যাতে ভারতের সিনেমা হলেও বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে।’’