একজন ডাক্তারের কাজই রোগীর রোগ সারানো। কিন্তু আপনি যদি দেখেন, সেই ডাক্তার রোগ না সারিয়ে বরং পাপ সারায়, রক্তই তার ভাষা, ইনসাফই তার শপথ! তাহলে কি আপনি চমকে যাবেন? যদি আপনি চমকে যান, তাহলে বলা যেতে পারে নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার এখানে সফল। কারণ তার নির্মাণে ঠিক এমন একজন ডাক্তার হয়েই চমকে দিতে আসছেন দেশের অন্যতম গুণী অভিনেতা মোশাররফ করিম।
এত কথা বলা এ কারণে যে, সঞ্জয় সমদ্দার রবিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় তার প্রথম দেশি সিনেমা ‘ইনসাফ’-এর দ্বিতীয় পোস্টার শেয়ার করেছেন। পোস্টারে দেখা যায় হাতে কুড়াল, মুখে দাড়ি, পোশাকে রক্তের ছিটেছিটে দাগ, চোখে সানগ্লাস পরে ভয়ঙ্কররূপে হাজির এক অভিনেতা।
পোস্টারটি শেয়ার করে সঞ্জয় সমদ্দার লিখেছেন, ‘এই ডাক্তার রোগ নয়, পাপ সারায়! রক্তই তার ভাষা, ইনসাফই তার শপথ!’
প্রথমে পোস্টার দেখে আপনি ধাক্কা খেতে বাধ্য! কে ইনি! একটু ভালো করে খেয়াল করলে তবেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি আর কেউ নন, সবার পছন্দের অভিনেতা মোশাররফ করিম!
কেউ যদি না জানতেন এই সিনেমায় মোশাররফ করিম অভিনয় করছেন, পোস্টার দেখে দ্রুত তাকে চিনে ফেলা শক্ত হবে বৈকি!
যাই হোক, তিনি যে মোশাররফ করিম এবং তার এই নতুন লুক দেখে প্রশংসার ঢল নেমেছে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে! একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এ এক অন্য মোশাররফ করিম!’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘এমনটাই তো চাই মোশাররফ করিমকে, অন্যভাবে উপস্থাপন করা হোক।’
অন্য আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘এমন লুক! মাথা নষ্ট হয়ে যাবে দর্শকের। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পরিচালক-অভিনেতা, এই জুটির জন্য।’
তবে ভালোর বিপরীতে থাকে মন্দ দিকও। অর্থাৎ মোশাররফের এমন লুকের প্রশংসার পাশাপাশি অনেকেই এটাকে তামিল সিনেমার লুক বলছেন। অনেকে এমনও বলছেন যে, মোশাররফ করিমকেও শেষ পর্যন্ত তামিল অভিনেতাদের মতো লুক নিতে হলো! কারণ, সম্প্রতি শাকিব খান (বরবাদ), সিয়াম আহমেদ (জংলি) আর নিশোর (দাগি) লুক নিয়েও এমন বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
এমনকি ‘ইনসাফ’ সিনেমার প্রথম পোস্টারে আরেক অভিনেতা শরিফুল রাজকেও এমন রক্তমাখা, হিংস্র লুকে দেখা গেছে। যা তামিল ট্রেন্ডেরই প্রতিচ্ছবি বলে দাবি করছেন অনেকে। এবার কি তাহলে সেই দৌড়ে সামিল হলেন মোশাররফ করিমের মতো অভিনেতাও!
নির্মাতা অবশ্য তা মানতে চাইলেন না। তিনি দিলেন তার পক্ষে শক্ত যুক্তি।
নির্মাতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেখুন, আমরা চেয়েছি নতুন এক মোশাররফ করিমকে দেখাতে। সবসময় তো তাকে প্রায় ক্লিন সেভেই দেখা গেছে। আমাদের মনে হয়েছিলো এবার ভিন্ন কিছু করা যাক তাকে নিয়ে। এটা আমাদের ডিম্যান্ডিং লুক ছিল। এখন কারও যদি মনে হয়, তামিল সিনেমার মতো লুক, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। এমনকি এর আগে শাকিব বা সিয়ামের কেমন লুক ছিল, সেটা নিয়েও ভাবিনি আমরা। আমরা শুধু নতুন এক মোশাররফ করিমকেই দর্শকের সামনে আনতে চেয়েছি। এখানে অন্য কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।’
‘ইনসাফ’ সিনেমায় মোশাররফ করিমের চরিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে সঞ্জয় সমদ্দার বলেন, ‘একজন ডাক্তার জীবনের ঠিক কোন পরিস্থিতিতে পড়লে এমন হিংস্র হয়ে ওঠেন বা হাতে তুলে নেন কুড়াল, তার একটা উদাহরণ মোশাররফ করিমের এই চরিত্র। আগ বাড়িয়ে তার চরিত্র নিয়ে এর বেশি কিছু বলবো না। সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।’
এবার একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। বলিউড সিনেমা ‘অ্যানিমেল’ যখন মুক্তি পেলো, অভিনেতা রণবীর কাপুরের লুক দেখে চমকে উঠেছিলেন সিনেমাপ্রেমীরা। এমনকি বাংলাদেশের দর্শকও তখন এই লুকের ধন্য ধন্য করতে থাকেন। অনেকে এমন মন্তব্যও করেন যে, দেশের অভিনেতাদের কেন এমন লুকে হাজির করতে পারেন না নির্মাতারা। অনেকটা সেই জন-আকাঙ্ক্ষা বিপুল বাস্তবায়ন ঘটতে দেখা যায় গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘বরবাদ’ সিনেমার পোস্টারে। যেখানে ঠিক ‘অ্যানিমেল’-এর রণবীরের লুকে ধরা দেন শাকিব খান। সেই লুক, রক্তে মাখামাখি শরীর, চোখে হিংস্রতা! শুধু শাকিবই নয়, একই ঈদের আরেক সিনেমা ‘জংলি’তে সিয়াম ধরা দেন এমন রক্তমাখা, হিংস্র লুকে। বাদ যাননি সময়ের আরেক অভিনেতা আফরান নিশোর ‘দাগি’ পোস্টারেও।
বলা প্রয়োজন, অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার ‘ইনসাফ’-এর শুটিং শেষ হয়েছে। চলছে পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ। আসন্ন ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটি।
উল্লেখ্য, ‘ইনসাফ’ সিনেমায় মোশাররফ করিম, শরিফুল রাজ ছাড়াও অভিনয় করছেন তাসনিয়া ফারিণ। সিনেমাটির প্রযোজনায় রয়েছে তিতাস কথাচিত্র এবং টিওটি ফিল্মস।
বলা ভালো, টিভি নাটকে প্রশংসা কুড়িয়ে সঞ্জয় সমদ্দারের সিনেমায় অভিষেক হয় টলিউডে, নায়ক-প্রযোজক জিতের হাত ধরে। ‘মানুষ’ নামের সিনেমাটি ভালোই নাম কামিয়েছে। তবে দেশের জন্য ‘ইনসাফ’ই প্রথম সিনেমা এই নির্মাতার।