সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলের পাতা খুললেই দেখা যায় খারাপ কিংবা নেতিবাচক খবরের ছড়াছড়ি। সঙ্গে কাদা ছোড়াছুড়ি, বিতর্ক-সমালোচনা আর নিন্দার গল্পগাথা। তারকাদের সামাজিক কিংবা মানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও নেতিবাচক শব্দের মিছিল লেগে থাকে হরহামেশা। কিন্তু এসব নেতিবাচক ঝড়ের ভেতরে কি কোনও ইতিবাচক বিষয় নেই? যা নিন্দা-সমালোচনার স্রোতের বিপরীতে ভালো-আলোর দিকে উৎসাহিত করবে ভক্ত কিংবা সমাজকে। থাকলে সেটা কেমন? এবারের ঈদ বিশেষ আয়োজনে শোবিজ তারকাদের কাছ থেকে তেমন কিছুই জানার চেষ্টা করেছে বাংলা ট্রিবিউন। এ পর্বে রইলো কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের দৃষ্টিভঙ্গি।
চারপাশে অনেক নেগেটিভিটি। একটু কিছু হলেই চুইংগামের মতো টেনে টেনে বাড়াই আমরা। এগুলো আর ভাল্লাগে না- অনেকটা ক্লান্তির স্বরে কথাগুলো বললেন সময়ের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। বর্তমান বাংলাদেশে যার চেয়ে বেশি বিশ্বজুড়ে কেউ আর বাংলা গান পরিবেশন করার সক্ষমতা রাখেন না।
কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে, চারপাশের নেগেটিভিটি ছাপিয়ে পজিটিভ কিছু জানার আগ্রহে। কারণ, সোশ্যাল হ্যান্ডেলে অন্য যেকোনও তারকার চেয়ে আঁখির প্রতিক্রিয়া বরাবরই পজিটিভ আদলে থাকে। প্রসঙ্গের শুরুটা করলেন দেশ নিয়ে।
বিদেশের উদাহরণ টেনে এই শিল্পী বলেন, ‘আমরা বিদেশে গেলে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি চারপাশে। ছবির মতো লাগে রাস্তাঘাট। আমরা ভিডিও করি সেসব। আমি এখন স্পষ্ট দেখছি, আমার দেশটাও সেদিকে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখি দেশটা একদিন বিউটিফুল হবে। অন্য দেশ নিয়ে আমাদের আর অতোটা মুগ্ধতা থাকবে না।’
দেশ নিয়ে মুগ্ধতা থাকলেও গানবাজনা নিয়ে খানিক হতাশা আছে এই শিল্পীর মনে। কিন্তু সেটি প্রকাশ করতে গিয়েও গিলে ফেললেন। জানালেন আরেকটি পজিটিভ গল্প। বললেন, ‘গানবাজনায় যেখানে ছিলাম গত বছর, এবারও সেখানেই আছি। গত বছর ফিল্মের কিছু কাজ পেয়েছি, এবার সেটা পাইনি। তবে এবার বেশ কিছু ফিল্ম ভালো করেছে। যদিও গান সেভাবে পাচ্ছি না। পাবো নিশ্চয়ই। কিন্তু সিনেমাটা যে আমাদের ভালো হচ্ছে, এটাই প্রশান্তি। সিনেমা ভালো করলে গানও ভালো হবে, এটাই নিয়ম।’
জানালেন, এরমধ্যে ব্যক্তিজীবনে বড় একটা পরিবর্তন ঘটেছে তার। দুই মেয়ের একজন দেশ ছেড়েছেন পড়াশোনার জন্য। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে আঁখি ফলোয়াররা জানেন নিশ্চয়ই, দুই কন্যাকে তিনি কতোটা আগলে রাখা মা। ফলে এক কন্যার চলে যাওয়াটা ছন্দপতনের কারণ হয়ে আছে ছন্দময় এই মায়ের জীবনে।
আঁখি প্রসঙ্গটি টেনে বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। আমার মেয়ে দেশের বাইরে পড়তে গেছে। এটা ভালো রকমের মানসিক ধাক্কা। তবে পজিটিভ দিক হচ্ছে এই, সে ডাক্তারি পড়তে গেছে। গানের শিল্পীর মেয়ে ডক্টর- এটা বলতেও আমার ভালো লাগবে। কিন্তু আমি এটা নিয়ে প্রতিনিয়ত একটা হাহাকারের মধ্যে থাকি। একটা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি। এটা নেগেটিভ না পজিটিভ, আমি জানি না। এটা কষ্ট আরকি। কিছু ভালো খেতে গেলেও ওর জন্য কষ্ট হয়। তবে স্বপ্ন দেখি, আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ে এসে দেশেই প্র্যাকটিস করবে। এই ভাবনাটুকুই আমার আপাতত সুখ।’
কথায় কথায় জানালেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কথাও। প্রকাশ করলেন স্বস্তি। কারণ, করোনার স্থবিরতা কেটে মূলত চলতি বছরই শতভাগ স্বাভাবিক হয় শো ইন্ডাস্ট্রি। তার ভাষায়, ‘আমি নিজে তো প্রচুর শো করেছিই। বলা যায় বিরামহীন। একেবারে রোজার আগের দিন পর্যন্ত টানা। এরমধ্যে অসুস্থ হয়েছি। কিন্তু শো থামাইনি। কিন্তু আমার স্বস্তিটা অন্যখানে। তিন বছর পর এবার কোনও শিল্পীকে ঘরে বসে থাকতে হয়নি। প্রতিটি শিল্পী, মিউজিশিয়ান, আয়োজক মনখুলে শো করেছেন। সেই সুযোগটা সবাই পেয়েছেন। আমি মনে করি করোনার পর এটা আমাদের জন্য নতুন একটা জীবন। সেই জীবনটা আমরা এবার সবাই উপভোগ করেছি। সেজন্যই অসুস্থ হয়েও কোনও শো ফিরাইনি। বাঁচার আনন্দটা মাইক্রোফোন মুঠোয় নিয়ে উপভোগ করেছি।’
এই বিষয়টি তুলে এনে আঁখি বললেন, ‘মিডিয়া, সোশ্যাল হ্যান্ডেল বা ইউটিউবারদের এই বিষয়টি খারাপ লাগে বটে। এরপরও আশার আলো খুঁজে পাই, একটু অন্যভাবে। আগে নেতিবাচক কিছু প্রকাশ হলে শিল্পীরা মুখ বুঁজে খুব কাঁদতো, আমিও অনেক কেঁদেছি। কিন্তু এখন মনে হয়, আমরা ইমিউনিটি বিল্ডআপ করে ফেলেছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মতো! এখন আর আমাদের গায়ে লাগে না এসব নেগেটিভিটি। এটা বড় অর্জন কিংবা পজিটিভ দিক। এখন আর যে যত কটু কথাই বলুক, আমাদের আর কান্না পায় না। পায়, তবে আগের মতো দরজা বন্ধ করে হাউমাউ করে কাঁদি না। কিংবা যে আমাকে কাঁদালো, তার প্রতি অভিমান আর হয় না। ভেবে নিই, ইটস ওকে; ইগনোর আঁখি।’
বলা দরকার, এই ঈদে আঁখি আলমগীরের কণ্ঠে অসম্ভব মিষ্টি একটা প্রেমের গানচিত্র প্রকাশ করেছে ডিএমএস। যে গানটির সুর করেছেন কিংবদন্তি রুনা লায়লা আর কথা লিখেছেন নন্দিত গীতিকবি কবির বকুল। এমন গান আঁখির কণ্ঠে সচরাচর মেলে না। শ্রোতা ও সমালোচকরা বলছেন, গানটি নতুন আঁখিকে তুলে ধরলো অন্য আলোয়।