মন্ত্রী-এমপি ও সাংবাদিকদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল

জঙ্গি সন্দেহে আটক ৮ বাংলাদেশিসিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে আটক আট বাংলাদেশি দেশে ফিরে সরকার উৎখাতের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনীর ওপরও হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
মঙ্গলবার ওই আট বাংলাদেশিকে আটকের ঘোষণা দিতে গিয়ে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কাছ থেকে জব্দ করা হত্যা তালিকার ভিত্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
মঙ্গলবার (৩ মে) সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, দেশে ফিরে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছিলেন এমন ৮ বাংলাদেশি নাগরিককে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ। গত এপ্রিলে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের আওতায় তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে চরমপন্থী চক্রের বেশ কিছু সামগ্রী পাওয়ার কথা জানায় সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘জিহাদের জন্য আমাদের প্রয়োজন’ শীর্ষক একটি নথিতে হত্যা তালিকাটি পাওয়া গেছে। তালিকায় পাওয়া গেছে ১৩ ধরনের লক্ষ্যবস্তু। সেগুলো হলো-
১. বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)

২. র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)
৩. পুলিশ
৪. সিভিল ইনফরমেশন ডিফেন্স (সিআইডি)
৫. বিমান বাহিনী
৬. নৌ বাহিনী
৭. এমপি
৮. মন্ত্রী
৯. চেয়ারম্যান
১০. সরকারি কর্মকর্তা (সাধারণ ও উচ্চ পদস্থ)
১১. প্রজাতন্ত্র সরকারের নেতা
১২. মিডিয়াকর্মী
১৩. ইসলামে অবিশ্বাসী (হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, নাস্তিক, মুনাফিক)

নথিটি তৈরি করেছেন আটক রহমান মিজানুর নামে এক যুবক। তিনিই মূলত সিঙ্গাপুরে ‘ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ’ (আইএসবি) নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।



রহমান মিজানুরের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া হত্যার টার্গেটের তালিকা
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হত্যা তালিকা ছাড়াও আটকদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মানের এএক্স-৫০ স্নাইপার রাইফেল যথাযথভাবে চালানোর জন্য একটি নির্দেশিকা পাওয়া গেছে। তাছাড়া কীভাবে অস্ত্র ও বোমা তৈরি করতে হয় তারও একটি নির্দেশিকা রহমান মিজানুরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বোমা তৈরির এ নির্দেশিকাটি বাংলায় লেখা।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্য সংগঠনটির সংগ্রহ করা বেশ কিছু অর্থ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া আইএস ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পুস্তিকাও জব্দ করা হয়।

আটক বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বোমা তৈরির নির্দেশিকাটি উদ্ধার করা হয়
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে এর মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে আলামত মিলেছে।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক ইফতেখারুল বাশার সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসীদের একাংশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠনের বিদেশি শাখা থেকে স্থানীয় শাখায় তহবিল যোগানো হয়। সূত্র: স্ট্রেইট টাইমস

/এফইউ/বিএ/এজে