দেশব্যাপী শ্রমিক ধর্মঘটে উত্তাল ফ্রান্স

শ্রম আইন সংস্কারের জের ধরে শ্রমিকদের ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে ফ্রান্সে। প্যারিসসহ দেশটির অন্যান্য শহরে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে ১৫ পুলিশ সদস্য এবং বহু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। অন্তত ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মশাল এবং ফুল হাতে এক বিক্ষোভকারী

তেল শোধনাগার, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বন্দর ও পরিবহনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকরাও ওই ধর্মঘটে অংশ নেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কপথ ও সেতু অবরোধ করেন। শ্রমিকরা পরমাণু সাবমেরিন ঘাঁটিও অবরোধ করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরোধের কারণে প্যারিস, নন্টস ও তুলুজ বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। রেল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে দূরপাল্লার এবং অভ্যন্তরীণ রেল সেবাও বাধাগ্রস্ত হয়।

শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বড় বড় নগরগুলোতে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ১ লাখ ৫৩ হাজার শ্রমিক দেশব্যাপী ওই বিক্ষোভে যোগ দেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, প্রকৃত সংখ্যাটা এর প্রায় দ্বিগুণ।

ফ্রেঞ্চ ইউনিয়ন অব পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রিস এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের ১২ হাজার পেট্রোল স্টেশনে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

বরদেয়াক্স শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

রাজধানী প্যারিসেই ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া লিওঁ এবং বরদেয়াক্স শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, এবার ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল আসর ইউরো আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। জুনের প্রথমদিকেই আসরটি শুরু হতে যাচ্ছে। এসময়ে এই শ্রমিক অসন্তোষ নিশ্চিতভাবেই দেশটির জন্য চিন্তার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রস্তাবিত বিল বাতিল করা হবে না।’ তবে এতে কিছুটা পরিবর্তন করা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভালস বলেন, ‘আইনে পরিণত করার আগে এখনও প্রস্তাবিত বিলটিতে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে।’

শ্রমিক বিক্ষোভে বিপর্যস্ত রেল খাত

মূলত প্রস্তাবিত বিলের অনুচ্ছেদ-২ নিয়েই মূল আপত্তি শ্রমিকদের। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকারি যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, প্রয়োজনে যে কোনও কোম্পানি তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেগুলোর বিরোধিতা ও পরিবর্তন করতে পারবে।

নতুন আইনে সপ্তাহে গড়ে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো কর্মঘণ্টা বাড়াতে বা কমাতে পারবে। সপ্তাহে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৪৬ ঘণ্টা করার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে।

সেই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি কমানোর ক্ষেত্রেও ফার্মগুলোকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং শ্রমিকদের ছুটি বা বিশেষ ছুটি (মাতৃত্বকালীন ছুটি বা বিবাহের জন্য ছুটি) দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোম্পানিগুলোকে অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইনে ফ্রান্সে শ্রমিকদের এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।

টোর শহরে বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধ

তবে সরকার এই বিষয়টিকেই উল্লেখ করেছে বেকারত্ব দূর করার মাধ্যম হিসেবে। সরকার বলছে, কোম্পানিগুলোকে শ্রমিক নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হলে দ্রুত বেকারত্ব দূর হবে।  

ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী মিশেল স্যাপিন অনুচ্ছেদ-২ পুনরায় লেখার সুপারিশ করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী ভালস অর্থমন্ত্রীর ওই পরামর্শ বাতিল করে দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বুধবার (২৫ মে) মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ফ্রান্সের জনগণ ও অর্থনীতির রসদের যোগান নিশ্চিত করতে সবকিছু করতে হবে।’

সরকার শ্রম আইন সংস্কার বিলটি পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই পাস করার চেষ্টা করছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করছে শ্রমিকরা। সূত্র: বিবিসি।

আরও পড়ুন:

দিল্লি-তেহরান বন্দর চুক্তি: নেপথ্যে ভারতের চীনবিরোধী দক্ষ কূটনীতি
সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবে সুইফট
নতুন নেতা নির্বাচন করল তালেবান

/এসএ/