হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা

স্বাভাবিক হয়ে আসছে মিউনিখের পরিস্থিতি, শিগগির তদন্তের অগ্রগতি জানাবে পুলিশ

শুক্রবারের ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে মিউনিখের পরিস্থিতি। এদিকে তদন্ত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিউনিখ পুলিশ। ঘটনার সময় যারা ঘটনাস্থলের ছবি তুলেছেন কিংবা ভিডিও করেছেন, কিন্তু অডিও ধারণ করেছেন তাদের সবাইকে সেইসব তথ্য আপলোড করার অনুরোধ জানিয়েছে তারা। তবে হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে অস্পষ্টতা কাটছে না। কেন এই হামলা, তা নিয়ে কোনও সম্ভাব্য ধারণার কথাও জানা যায়নি।

মিউনিখ পুলিশ

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার পর ক্রমশ মিউনিখ পুরনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চলতে শুরু করেছে গণপরিবহন। এদিকে একটি বিশেষ একাউন্টে মিউনিখ হামলার তথ্য-প্রমাণ আপলোড করতে জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে মিউনিখ পুলিশ। তাদের অনুরোধ, যারা ঘটনার সময় ভিডিও-অডিও-ছবি ধারণ করেছেন, তারা যেন ওই একাউন্টে নিজ নিজ কনটেন্ট আপলোড করেন।

উল্লেখ্য, মিউনিখে ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট ও অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন ১৮ বছর বয়সী বন্দুকধারী। পুলিশ বলছে, তার পূর্ববর্তী কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। তাই হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও কিছু বলতে পারছেন না তারা। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদী সংযোগ থাকার আশঙ্কার কথা বলা হলেও এখন পুলিশ বলছে, ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সংযোগ আছে কিনা, তা এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় ইসলামী চরমপন্থীদের সংযোগেরও কোনও আলামত মেলেনি।

ঘটনাস্থল থেকে সরে আসছেন লোকজন

হামলাকারীসহ ১০ জন নিহতের পাশাপাশি এ ঘটনায়  আহত হয়েছে আরও অন্তত ২১ জন। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মিউনিখে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে করণীয় নির্ধারণ করতে বার্লিনে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল।

শুক্রবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার ঘোষণা দেন মিউনিখ পুলিশের প্রধান হুবেরটাস আন্দ্রে।  পুরো অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। আন্দ্রে জানান, হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক।  তবে তার হামলার উদ্দেশ্য আসলে কী ছিল সে ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।  এর আগে একটি জার্মান রেডিওকে পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ওই হামলার ঘটনাকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। জার্মান চ্যান্সেলরের চিফ অব স্টাফও বলেছেন, এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদের সংযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তবে আবার নিশ্চিত করেও বলা যাচ্ছে না। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিউনিখের পুলিশ প্রধান। অবশ্য এর আগে বিভিন্ন খবরে ভারি অস্ত্র ব্যবহারের কথা জানানো হয়েছিল। 

রাতের পুলিশি অভিযান

আন্দ্রা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ওই ঘটনায় তিন বন্দুকধারী জড়িত ছিল বলে ধারণা করতে বাধ্য হয় পুলিশ। তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা যে তথ্য দিয়েছিলেন তাতে পুলিশ ধারণা করেছিল হামলায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। ঘটনাস্থল থেকে দুই ব্যক্তির গাড়িতে করে দ্রুত চলে যাওয়ায় দৃশ্যটি সন্দেহ জোরালো করে তুলেছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখা গেছে ওই দুই ব্যক্তি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না'।

মিউনিখে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। এ হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন ইউরোপে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্ব নেতাদের অনেকেই মিউনিখ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।  

বিশেষ বাহিনীর অভিযান

উল্লেখ্য,শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিউনিখের একটি রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারে হামলা চালায় বন্দুকধারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে হামলাকারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে ব্যাপক অভিযান চলে। পুলিশের অভিযানে দুই হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেন। শনিবার ভোর পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়, রেলস্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকে বন্দুকধারীর মরদেহ উদ্ধার হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে জার্মানিতে এটি দ্বিতীয় সন্ত্রাসী হামলা। এর আগে সোমবার জার্মানির একটি ট্রেনে আফগান কিশোরের কুঠার হামলার পর সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। এর মধ্যেই শপিং সেন্টারে এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলো। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জার্মানিতে কুঠার হামলাটি ছিল জিহাদি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথম হামলা। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। ওই হামলাটির দায় স্বীকার করে আইএস। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, ডয়েচে ভেলে

/এফইউ/বিএ/