বিদেশি জঙ্গিদের কাছে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ওহাইও ইউনিভার্সিটির ‘হামলাকারী’: এফবিআই

রাজাক আলী আর্তানযুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর দাবি, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সন্দেহভাজন হামলাকারী আবদুল রাজাক আলী আর্তান মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা এবং আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতা আনোয়ার আল-আওলাকি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারেন। বুধবার (৩০ নভেম্বর) এফবিআই কর্মকর্তারা এমন দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর আগে মঙ্গলবার আইএস-এর কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ সংগঠনটির পক্ষ থেকে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির হামলার দায় স্বীকারের খবর প্রকাশ হয়।  
উল্লেখ্য, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির কলম্বাসে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাসের ওয়াটস হল ভবনের কাছে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের দিকে সজোরে ছুটে আসে একটি গাড়ি। পরে গাড়িটির চালক ছুরি নিয়ে লোকজনের দিকে তেড়ে আসেন। সেখানে দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ ১১ জন আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানানো হয়। পরে জানানো হয়, হামলাকারী রাজাক সোমালি বংশোদ্ভূত নাগরিক এবং তিনি কলম্বাস ক্যাম্পাসের আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী।
বুধবার এফবিআই-এর স্পেশাল এজেন্ট ইনচার্জ অ্যাঞ্জেলা বিয়ার্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারছি না অন্য কেউ এ হামলা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা, কিন্তু তদন্ত চলমান আছে। তাতে মনে হচ্ছে আর্তান অন্তত আনোয়ার আওলাকি এবং আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং তদন্তের অংশ হিসেবে আমরা এ বিষয়টিকে মাথায় রাখব।’
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় মার্কিন বংশোদ্ভূত আওলাকি নিহত হন। সেসময় আওলাকিকে আল কায়েদার ইয়েমেন শাখার ‘চিফ অব এক্সটার্নাল অপারেশন্স’ এবং সংগঠনটির ইন্টারনেটে প্রচারণাকারী হিসেবে শনাক্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের ধারণা এক ফেসবুক মেসেজে আল-আওলাকিকে ‘হিরো’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আর্তান। আর ওই ফেসবুক মেসেজে ভিন্ন নাম ব্যবহার করেছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার দিন ওয়াল মার্টের একটি স্টোর থেকে আর্তান একটি ছুরি কিনেছিলেন। তবে হামলায় ব্যবহৃত হওয়া ছুরিটি সে একই ছুরি কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিয়ার্স জানাস এফবিআই এর কাছে আর্তান হামলার আগে থেকে সম্ভাব্য হুমকি বলে বিবেচিত হননি এবং তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়নি। বিয়ার্সের মতে, এ হামলা সন্ত্রাসবাদ ছিল কিনা সে ব্যাপারে এতো তাড়াতাড়ি কিছু বলা সম্ভব নয়। আইএস-এর দাবির মধ্য দিয়েও বোঝা যাচ্ছে না সংগঠনটি এ হামলায় কোনও ভূমিকা রেখেছিল কিনা।

আর্তানের কলম্বাসের বাড়ি থেকে পাওয়া কিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।

বিয়ার্স জানান, সোমালি শরণার্থী আর্তান পাকিস্তান হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। মুসলিম অভিবাসীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার টুইটারে আর্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভয়াবহ হামলার কৃতিত্ব নিচ্ছে আইএস। হামলাকারী ওই সোমালি শরণার্থীকে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া ঠিক হয়নি।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ পুলিশের বরাত দিয়ে জানায়, সোমালিয়ায় জন্মগ্রহণকারী আবদুল রাজাক আলী আর্তান নামের ওই হামলাকারী তার পরিবারের সঙ্গে ২০০৭ সালে সোমালিয়া থেকে চলে আসে। গত দুই বছর ধরে পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। এর আগে তারা পাকিস্তানে বসবাস করতো বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি-কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আর্তান যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী অধিবাসী।

আমাক-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ওহাইওতে হামলাকারী আইএসের সৈনিক। আন্তর্জাতিক জোটভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সে এ অভিযান চালিয়েছে।’

রাজাক আর্তানের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে আমাক। সেখানে দেখা গেছে একটি নীল গেঞ্জি পরে বসে আছে রাজাক আর্তান। তবে বিবৃতিটি সত্যিই আইএস দিয়েছে কিনা কিংবা ওই হামলাকারীর সঙ্গে আইএস-এর সরাসরি সংযোগ ছিল কিনা তার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

/এফইউ/