প্রথম নারী কমিশনার পেলো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড

ক্রেসিদা ডিকব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে প্রথমবারের মতো কমিশনার পদে নিয়োগ পেলেন একজন নারী। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ক্রেসিদা ডিক নামের এ নারী যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা।

কর্মজীবনে ইতোপূর্বে ব্রিটিশ পুলিশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী ইউনিটের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। একপর্যায়ে যোগ দেন পররাষ্ট্র দফতরে। সর্বশেষ নিয়োগ পেলেন লন্ডনের পুলিশ প্রধান হিসেবে। বিদায়ী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার স্যার বার্নার্ড হোগান-হোয়ে-এর স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। এর আগে চলতি মাসেই পদত্যাগ করেন বিদায়ী পুলিশ কমিশনার স্যার বার্নার্ড হোগান হোয়ে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন নবনিযুক্ত মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ক্রেসিদা ডিক। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটি একটি মহান দায়িত্ব এবং একটি চমকপ্রদ সুযোগ। আমি লন্ডনের জনগণের সুরক্ষা এবং তাদের সেবা করার উপায় খুঁজছি। আবারও মেট্রোপলিটন পুলিশের চমৎকার নারী ও পুরুষদের সঙ্গে আবারও কাজ করছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ; যারা আমাকে শিখিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন এবং আমার পথচলায় সমর্থন যুগিয়েছেন।

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পদে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন ৫৬ বছরের ক্রেসিদা ডিক। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেল প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

ক্রেসিদা ডিক-এর বিভিন্ন পদক্ষেপ সবসময় বিতর্কমুক্ত ছিল না। ২০০৫ সালে তিনি এক অভিযানের দায়িত্বে থাকাকালে জিন চার্লস দে মেনেজেস নামের এক নিরপরাধ ব্যক্তি নিহত হন। একজন আত্মঘাতী হামলাকারীর জন্য ভুলক্রমে তাকে গুলি করে হত্যা করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা। ২০০৭ সালে ফৌজদারি বিচারে তাকে যে কোনও ধরনের ব্যক্তিগত দোষারোপ থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় পুলিশ বাহিনী। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৯ সালে। এ সংস্থাটি লন্ডন শহরে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত আছে সংস্থাটি। এছাড়া কূটনীতিক ও ভিআইপি-দের সুরক্ষা প্রদানের মতো রাষ্ট্রীয় নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড বলেন, ক্রেসিদা ডিক একজন ব্যতিক্রমী নেতা। মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য তার একটি স্বচ্ছ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সেবার পরিসরভুক্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য সম্পর্কে তার জানাশোনা রয়েছে।

আম্বার রুড বলেন, তিনি এখন যুক্তরাজ্য পুলিশের সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ, হাই-প্রোফাইল এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সন্ত্রাসের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি, জালিয়াতি এবং সাইবার ক্রাইমের মতো হুমকির প্রেক্ষিতে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এখানে যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা প্রদানের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্রেসিদা’র দক্ষতা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ২১ শতকের অপরাধের ধরন মোকাবিলায় উপযোগী করে তুলবে। এতে লন্ডন ও পুরো যুক্তরাজ্যকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত হবে।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ক্রেসিদা ডিক হবেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৮৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী কমিশনার। একইসঙ্গে তিনি হবেন এখানকার সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুলিশ কর্মকর্তা। এটা লন্ডনের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন। মেয়র হিসেবে আমার জন্য এটা একটা গর্বের দিন।

ক্রেসিদা ডিক এমন এক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন যখন লন্ডন মেট্রোপলিটন এলাকা উচ্চমাত্রার সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।

/এমপি/