বাংলাদেশ বা নেপালে পালিয়েছেন কলকাতার বিচারপতি কারনান?

সিএস কারনান
গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বাংলাদেশ বা নেপালে অবস্থান করছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিএস কারনান। এমনটাই জানিয়েছেন তার আইনি উপদেষ্টা ডব্লিউ পিটার রমেশ কুমার। বৃহস্পতিবার তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।

মাদ্রাজ হাইকোর্টের আইনজীবী রমেশ কুমার বলেন, আমরা চাই রাষ্ট্রপতি যেন মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে হস্তান্তরের অনুমতি দেন। কুলভূষণ যাদবের মামলার ক্ষেত্রে যেমনটা করা হয়েছে। আমরা পরবর্তী আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই সময়ে তার (কারনান) লুকিয়ে থাকা দরকার।

বিচারপতি কারনানের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিতের আবেদন করেছেন। তাদের দাবি, দলিত হওয়ার কারণেই এই বিচারকের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে।

রমেশ কুমার এমন সময় কারনানের পালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন; যখন সর্বোচ্চ আদালতের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশের পর পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।

সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সি এস কারনান সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে প্রধান বিচারপতিসহ আট বিচারকের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। এক দিনের মাথায় মঙ্গলবার আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচারপতি সি এস কারনানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়।

ভারতীয় আরেকটি সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের সাজা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই চেন্নাই চলে যান কারনান। রাজ্যের একটি গেস্ট হাউসে অবস্থানের পর বিল পরিশোধ না করেই বের হয়ে যান তিনি। পাশ্ববর্তী এলাকা অন্ধ্র প্রদেশের শ্রিকালাহাসতির একটি মন্দির পরিদর্শনের কথা ছিল তার।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে সুপ্রিম কোর্টের ২০ বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন কারনান। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান। সেখান থেকেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কারনানের সংঘাতের শুরু। এরপর তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বৈষম্য হচ্ছে বলে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন কারনান। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চের রায়ে তাকে বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গেলে তিনি তা করাতে অস্বীকৃতি জানান। ৮ মে-র মধ্যে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ থাকলেও সোমবার উল্টো প্রধান বিচারপতিসহ ৮ বিচারককে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেন কারনান। তবে সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর কারনানের দেওয়া সব নির্দেশ গুরুত্বহীন। বুধবার উল্টো আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ছয় মাসের জন্য জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস।

/এএ/এমপি/