চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) সম্প্রসারণের প্রশ্নে দিল্লি ও ইসলামাবাদ কাউকেই খুশি বলে মনে হচ্ছে না। সিপিইসি উদ্যোগের সম্প্রসারণে চীনের দীর্ঘমেয়াদী এই পদক্ষেপ নিয়ে দুই দেশেরই উদ্বিগ্ন বোধ করার কারণ আছে। কেননা চীনা কর্তৃপক্ষ আরও অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে বলে এরইমধ্যে আভাস পাওয়া গেছে। সিপিইসিতে আফগানিস্তান ছাড়াও আরও কিছু দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিং-এর।
সিপিইসিকে ভারতের এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে আঘাত করেছে। পণ্য আনা নেওয়া এবং মানুষের চলাফেরা নিয়ে যে মাপের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না। এর বড় কারণ হলো, করিডোর দিয়ে জনগণ ও পণ্যবাহী যানের চলাচল একমুখী আছে এবং তা-ই থাকবে।
পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি আফগানিস্তান ও ইরানকে সিপিইসি’র কক্ষপথে আনার মধ্য দিয়ে চীনের জন্য করিডোরটিতে বিনিয়োগকৃত বিপুল পরিমাণ (৫৭০০ কোটি ডলার) অর্থ তুলে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত সপ্তাহে আফগানিস্তান পর্যন্ত সিপিইসি’র সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় আরও কয়েকটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কথা বলেছেন। সে সময় আফগান পরাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন রাব্বানি এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সিপিইসিকে আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব নিয়ে আসিফ একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। রাব্বানি এই ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন কিনা তা বেইজিংভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো উল্লেখ করেনি।
দিল্লিভিত্তিক কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেন, সিপিইসি নিয়ে নতুন প্রস্তাব প্রকাশের আগেই চীনা কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা হিসাব করে ফেলেছে। তারা আফগানিস্তান হয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যৎ সংযোগের রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছে। এর বিস্তারিত তারা আসিফ ও রাব্বানির সঙ্গে বিনিময় করতেও পারেন, নাও করতে পারেন। পরে তাদের নীরবতা দেখে মনে হচ্ছিল নিজেদের অবস্থান জানানোর আগে সদর দফতরের সঙ্গে আলাপ করে নিতে চান তারা।
একই যুক্তি আবার ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য। এক বাক্যে বললে অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানের যে ক্ষতি হচ্ছে, ভারতেরও একই ক্ষতি হবে। ভারতের সিপিইসি বর্জনের কারণে করিডোরটিকে পূর্ব কিংবা দক্ষিণে সম্প্রসারণ করা যাবে না। আর সে কারণে ১২০ কোটি মানুষের লোভনীয় ভারতীয় বাজার হারাতে হবে এটিকে। এই বিবেচনা থেকে চীন বার বার ভারতকে সিপিইসি প্রকল্পে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। কূটনৈতিকভাবে জানা গেছে, সিপিইসি প্রশ্নে সায় দিলে ভারতকে তুমুল বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চল ইস্যুতেও ছাড় দিতে রাজি ছিল চীন।
এদিকে তাজিকিস্তান, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান এবং চীনকে সংযোগ করে পামির মালভূমি এলাকায় ওল্ড ওয়াখান রুট তৈরির প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নতুন করে শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে। ওয়াখান এলাকায় যেতে যে পুরনো সিল্ক রুটটি ব্যবহার করা হতো তার মধ্য দিয়ে উপরে উল্লিখিত দেশগুলোর কৌশলগত এলাকায় পৌঁছানো যায় না। পরিবহনজনিত সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এই অঞ্চল দিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
ওপেন সোর্স তথ্য অনুযায়ী, চীনা কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে বিদ্যমান কারাকোরাম হাইওয়ের উন্নয়ন করে ওয়াখান বাণিজ্য রুটের নতুন বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছে। ভারতের চেয়ে এটি পাকিস্তানকেই বেশি সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। কারণ এরইমধ্যে চীনারা কোটি কোটি অর্থ বিনিয়োগসহ সিপিইসি উদ্যোগের বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পে নেমেছে।