অভিবাসন কেলেঙ্কারি পর্যালোচনা শুরু যুক্তরাজ্যের

অভিবাসন কেলেঙ্কারির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কথিত উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমালোচনার মুখে বুধবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ পর্যালোচনার ঘোষণা দেন। এর  আগে উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কথিত অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর সরকারের পরিকল্পনায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয় বিরোধীরা।

থেরেসা মেবুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকালে এ নিয়ে পর্যালোচনার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বিষয়টির ভুল ত্রুটি ও চ্যালেঞ্চ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করবেন।

‘উইন্ডরাশ অ্যান্ড দ্য প্রাইম মিনিস্টারস পলিসি অব ক্রিয়েটিং অ্যা হস্টাইল এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক বিতর্কে অংশ নেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পর্যালোচনার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতর যাবতীয় প্রাসঙ্গিক তথ্য পাবে।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির তরফে সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত অন্য অনেক দেশ থেকে আসা অভিবাসীরাও উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসীরাও রয়েছেন।

লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি দিয়ানে অ্যাবোট বলেন, এই ইস্যুটি কমনওয়েলথজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। ব্রেক্সিটের পর আমরা যখন বাণিজ্য এবং অন্যান্য কারণে কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছি, সেই সময়ে কমনওয়েলথ নাগরিকদের সম্পর্কে সরকারের যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের (উইন্ডরাশ জেনারেশন) অনেকেই দেশটিতে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসন নীতির কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব। সম্প্রতি এমন অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সদ্যবিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে ১০ শতাংশের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এটি ফাঁস হওয়ার জেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৯ এপ্রিল রাতে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান সাজিদ জাভিদ। অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ব্যপারটি পরিচিতি পায় ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’ নামে। এ বিষয়টি নিয়েই বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে আলোচনা করেন ব্রিটিশ এমপিরা।

১৯৭৩ সালের আগে কমনওয়েলথ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অনেকেও এ উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন।

উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রায় হাজার হাজার জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত বাসিন্দা দেশটিতে বসবাস ও কাজের অধিকারের ব্যাপারে প্রামাণ্য নথির অভাবে বলপূর্বক নির্বাসনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেননা ১৯৭৩ সালের আগে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া এসব অভিবাসীরা নতুন কঠোর অভিবাসী আইনের আগে দেশটিতে পাড়ি দেন। ওই আইনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্যও যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হয়ে আসার বিষয়টি কঠিন করা হয়।

দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অবশ্য যুক্তরাজ্যের অভিবাসী বিতর্ক সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির ইতিহাসের প্রথম মুসলিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। শুধু প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতই নয়, এই প্রথম কোনও মুসলিম ব্রিটেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এই ব্রিটিশ মন্ত্রী অভিবাসীদের মর্যাদা ও তাদের সঙ্গে আচরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন।

কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেখা যায়, কমনওয়েলথভুক্ত ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকা থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের দলিল না থাকায় খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ক্যারিবিয়ান থেকে আসা উইন্ডরাশ প্রজন্মের ব্রিটিশ নাগরিকদের সাহায্য করা। তাদের সঙ্গে যাতে শিষ্টাচার ও সততার সঙ্গে আচরণ করা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। কারণ সেটাই তাদের প্রাপ্য। মানুষ কী দেখতে চায় আমি তাই চিন্তা করছি।’

বিতর্কের কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকার নাম থাকলেও কমনওয়েলথভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। নাগরিকত্বের দলিল না থাকায় বিপাকে পড়তে পারেন বাংলাদেশসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ব্যক্তিরা। এ প্রসঙ্গে নবনিযুক্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘যখন উইন্ডরাশ বিষয়টি শুনি আমি ভেবেছি, এটা আমার মা হতে পারতেন, আমর বাবা হতে পারতেন, আমার চাচার সঙ্গে বা আমার সঙ্গেও এমনটা হতে পারতো।’