আবারও উত্তপ্ত কাশ্মির সীমান্ত, চার সেনা নিহত হওয়ার দাবি ভারতের

২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে সম্মত হওয়ার পরও কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে গোলাগুলি হয়েছে। বুধবার (১৩ জুন) দিনের আলো ফোটার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ভারতীয় বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর চার সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও তিনজন। তবে পাকিস্তানি বাহিনীর দাবি, তারা নিজে থেকে হামলা চালায়নি, ভারতীয় সেনাদের ‘অনর্থক’ গুলি চালানোর জবাবেই তারা পাল্টা গুলি ছুড়েছে। এক বেসামরিক নিহত হওয়ার দাবি করে ভারতীয় কূটনীতিককে তলবও করেছে ইসলামাবাদ। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুবার মুখোমুখি যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালে উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় বেড়েছে গোলাগুলির ঘটনা। কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান পারস্পরিক গোলাগুলির সমান্তরালে চলছে দোষারোপের খেলা। এর মধ্যেই গত ২৯ মে জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ২০০৩ সালের যুদ্ধজনিত সমঝোতা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে একমত হয় ভারত ও পাকিস্তান। সমঝোতা অনুযায়ী, কোনও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হলে, ফ্ল্যাগ মিটিং,ফোনে কথোপকথন এবং আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কোনওভাবেই যাতে সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি নষ্ট না হয়,সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ‌কিন্তু ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি মানতে সম্মত হলেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি হচ্ছে।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার আবারও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানি সেনারাই আগে গুলি চালিয়েছে। তাদের দাবি, মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর এক ভারতীয় সেনাকে গুলি করে। মাটিতে পড়ে যাওয়া কমরেডকে উদ্ধার করার জন্য অন্য সেনারা যখন চেষ্টা করছিলো, তখন পাকিস্তানি সেনারা তাদের ওপরও গুলি ছুড়তে শুরু করে। শুরু হয় দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধ।  নাম প্রকাশ না করে দুই ভারতীয় সেনা দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তিন সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আর আহত অবস্থায় সরিয়ে নেওয়ার পর আরও এক সেনা নিহত হয়। তাদের দাবি, ভারতীয় সেনারা জবাব দিয়েছে এবং বুধবার সকালে সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ হয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা আগে গুলি ছুড়েনি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনর্থক হামলার মুখোমুখি হওয়ার পরই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তানি বাহিনীর দাবি, ভারতয়ি সেনারা মঙ্গলবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের একটি গ্রামকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় এক বেসামরিক নিহত হন। হামলার সময ওই ব্যক্তি তার বাড়ির পাশে গবাদি পশুকে ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এসব কথা জানিয়েছেন ওই পাকিস্তানি কর্মকর্তারা।

'বিনা উসকানিতে' গুলি চালিয়ে 'যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন' করার প্রতিবাদে ভারতীয় কূটনীতিককে তলব করেছে পাকিস্তান।