সুজাত হত্যাকাণ্ডে কাশ্মিরের ৩ বিদ্রোহী সংগঠনের নিন্দা ও শোক

পৃথক বিবৃতি আর টুইটার পোস্টে ‘রাইজিং কাশ্মির’ পত্রিকার সম্পাদক সুজাত বুখারি হত্যার নিন্দা জানিয়েছে জম্মু-কাশ্মিরের ৩ বিদ্রোহী সংগঠন। ‘রাইজিং কাশ্মির’ খবর দিয়েছে, হুরিয়াত কনফারেন্সের (জি) পক্ষে চেয়ারম্যান সৈয়দ আলি গিলানি, আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির পক্ষে চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক এবং জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট-এর পক্ষে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন মালিক সুজাত হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এই ৩টি সংগঠনই কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবিতে সেখানে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
সুজাত বুখারি

ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের শ্রীনগরে বুখারীকে তার কার্যালয়ের বাইরে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এখনও কেউ এই হত্যার দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা, জঙ্গিরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শ্রীনগরে নিজের অফিসের বাইরেই গুলিবিদ্ধ হন ‘রাইজিং কাশ্মির’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সুজাত আর তার দেহরক্ষী। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা সুজাত ও তার এক দেহরক্ষীকে  মৃত ঘোষণা করেন। আরও এক দেহরক্ষীর অবস্থা গুরুতর। খবরে বলা হয়, লাল চকের প্রেসক্লাবের বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন  সুজাত। আচমকা বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

হুরিয়াত কনফারেন্সের (জি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আলি গিলানি এক বিবৃতিতে সুজাত হত্যার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করাটা নৈতিকতা ও মানবিক নীতিশাস্ত্রবিরোধী। এ ধরনের রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে গিলানি বলেন, মতভিন্নতা থাকলেই কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করা যায় না। সুজাতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি নিহতের পরিবারের জন্যও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

টুইটারে সুজাত হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘সুজাত বুখারির হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক খবরে আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। এ ধরনের অমানবিকতা ক্ষমার অযোগ্য এবং কঠোরভাবে নিন্দনীয়।’ সুজাতকে কাশ্মিরের গর্ব উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, তার মৃত্যু সেখানকার জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। টুইটার পোস্টে মিরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, বুখারি এক বিদ্বান বুদ্ধিজীবী, একজন নির্ভীক সাংবাদিক এবং সবচেয়ে বড় কথা তিনি একজন নিঃস্বার্থ মানুষ, যিনি কিনা জনগণের জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। মিরওয়াইজ বলেন, ‘তার শোকাহত পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।’  

জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট-এর (জেকেএলএফ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন মালিকও রাইজিং কাশ্মিরের সম্পাদককে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। এ হামলাকে একটি বিবেকবান কাশ্মিরি কণ্ঠস্বরের ওপর বর্বরোচিত, ভয়ানক হামলা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার মতে, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ। ইয়াসিন মালিক আরও বলেন, কাশ্মির আজ দুর্বৃত্তদের হাতে বিচারবোধসম্পন্ন এক কণ্ঠস্বরকে হারিয়েছে। আসলে আমাদের সবার জন্যই এটি শোকের ক্ষণ। সুজাতের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ইয়াসিন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) তথ্য মতে, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ সালের এ পর্যন্ত ভারতে ৭৭ জনের বেশি সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।

অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লিখেছেন, সাহসী এবং নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন সুজাত বুখারি। এনডিটিভির নাজির মাসুদি বলেন, তিনি (সুজাত) খুব ভালো বন্ধু এবং তিনি আমাদের সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন। স্থানীয় এক পত্রিকা জানায়, সাংবাদিক ও সম্পাদক সুজাত বুখারির মাথায় ও পেটে বেশ কয়েকটি বুলেট বিদ্ধ হয়।