জার্মানির বিরোধী দলের অভ্যন্তরে পৃথক ইহুদি সংগঠন প্রতিষ্ঠা, তীব্র সমালোচনা

দলের অভ্যন্তরে একটি পৃথক ইহুদি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে বির্তকের মুখে পড়েছে জার্মানির কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি অলটানেটিভ ফর ডয়চেলান্ড-এএফডি। ওই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষী মুসলিমদের ব্যাপকতর অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই তারা ওই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে সমালোচকরা তা মানতে নারাজ।  দলটির বর্ণবাদী ও ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারা এই পদক্ষেপকে ‘ভণ্ডামো’ আখ্যা দিয়েছে। জার্মানির ইহুদি সংগঠনগুলোও ওই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

6720

এএফডি বলেছে, তারা দলের মধ্যে ১৯ জন সদস্য নিয়ে ‘জিউস ইন দ্য এএফডি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। কেউ ওই সংগঠনে যোগ দিতে চাইলে তাকে অবশ্যই এএফডি’র তালিকাভূক্ত সদস্য হতে হবে এবং নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় পরিচয়ে ইহুদি হতে হবে। এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জার্মানির ইহুদি সম্প্রদায়। এএফডি’কে বর্ণবাদী ও ইহুদিবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে রবিবার বিভিন্ন ইহুদি সংগঠনের সদস্যসহ প্রায় আড়াইশ মানুষ ফ্রাঙ্কফুর্টের সড়কে এই নতুন সংগঠনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। জার্মানির ইহুদি ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ডালিয়া গ্রিনফেল্ড বিক্ষোভস্থলে বলেন, ‘তোমরা আমাদের কাছ থেকে বৈধতা পাবে না।’

এএফডি’র শীর্ষ নেতারা অতীতে হলোকাস্ট বা ইহুদিনিধনকে হেয় করে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন। সবশেষ তাদের অভ্যন্তরে আলাদা ইহুদি সংগঠন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউস ইন জার্মানি’সহ কয়েকটি ইহুদি সংগঠন মিলে এক বিবৃতিতে দলটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এএফডি এমন একটি দল যারা ইহুদিদের ঘৃণাকারীদের আশ্রয় দেয় ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে। এমনকি হলোকাস্ট বা ইহুদি নিধনকেও অবজ্ঞা করে।   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলারের চালানো হত্যাযজ্ঞের নাম 'হলোকাস্ট'। এর প্রধান শিকার ২০ লাখ ইহুদি। ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধবন্দি, কমিউনিস্ট, রোমানীয় ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) মানুষ, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের ওপর এই গণহত্যা পরিচালিত হয়। মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি হয় ৫০ লাখ মানুষের।

দলের বাইরে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও এএফডি’র সংসদীয় গ্রুপের সহকারী প্রধান বিয়াট্রিক্স ভন স্টোর্চ তা মানতে নারাজ। জার্মান পত্রিকা ওয়েল্ট আম সোনটাগ-এ রবিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউস’কে ‘আনুষ্ঠানিক চার্চে’র সঙ্গে তুলনা করেন। সংগঠনটিকে সরকারের অংশ হিসেবে অভিহিত করেন স্টোর্চ।

এএফডি নিজেদেরকে ভোটারদের কাছে দেশের প্রতিষ্ঠিত মূলধারার দলগুলোর বিকল্প হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জার্মানিতে  অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল নামার পর শরণার্থীদের প্রতি বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে দলটি দেশের পার্লামেন্টের ৯০টি আসন জিতে নেয়। এর মাধ্যমে তারা প্রথমবারের মতো দেশটির সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।

জার্মান চ্যান্সেলন এঙ্গেলা মের্কেলের দল সিডিইউ’র সংসদীয় গ্রুপের সহকারী প্রধান স্টিফেন হারবার্থ এএফডি’র অভ্যন্তরে ইহুদি গ্রুপ খোলার পদক্ষেপকে ‘ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করেছেন। জার্মান পত্রিকা বিল্ড’র রবিবার সংস্করণ’কে দলটির অতীত ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, ‘যারা হলোকাস্টকে জার্মান ইতিহাসে পাখির মলের কণার সঙ্গে তুলনা করে, তারা কখনও ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করে না। বরং তারা হলোকাস্টের ভুক্তভোগীদের উপহাস করে। কোনভাবেই তারা ইহুদিদের পক্ষে না।’