ব্রিটিশ কারাগার থেকে বাড়ি ফিরলো সেই আনজেম চৌধুরী

যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে বাড়ি ফিরেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-কে সমর্থনের দায়ে অভিযুক্ত ব্রিটিশ-পাকিস্তানি আনজেম চৌধুরী (৫১)। ইস্ট লন্ডনে নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে সে। আইএসে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানোর দায়ে ২০১৬ সালে তাকে কারাদণ্ড দিয়েছিল দেশটির একটি আদালত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জামিন পেলেও তাকে গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়।noname

৫১ বছর বয়সী আনজেম চৌধুরী তার সাজার প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়েছে বেলমার্শ হাই সিকিউরিটি জেলে। তবে কারাগারে ভালো আচরণের কারণে গত অক্টোবরে তাকে শর্ত সাপেক্ষে সাজার বাকি সময় কারাগারের বাইরে কাটানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে পায়ের গোড়ালিতে ইলেক্ট্রনিক ট্যাগ লাগিয়ে রাখার মতো শর্তও রয়েছে। তবে এখন আর তাকে নজরদারির জন্য প্রোবেশন হোস্টেলে থাকতে হবে না।

সাড়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আনজেম চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচ সন্তানের জনক। তিন বছর কারাগারে কাটানোর পর ছয় মাস তাকে বাধ্যতামূলক ‘প্রবেশন হোস্টেলে’ থাকতে হয়। সেখানে তার আচরণ ও কথাবার্তার বিষয়ে গভীরভাবে নজরদারি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে আনজেম চৌধুরীর নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে বের হওয়া কিংবা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না। নামাজে যেতে চাইলে ওই মসজিদের ব্যাপারেও তাকে আগে থেকে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হতো। মসজিদের ভেতরও তার কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতো লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ।

‘প্রবেশন হোস্টেল’থেকে বাড়ি ফিরলেও সাড়ে পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ওপর নজরদারি ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।

আরও যেসব শর্ত আনজেম চৌধুরীকে মেনে চলতে হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাতের বেলা বের না হওয়া, জঙ্গিবাদ প্রচারের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বা সন্দেহভাজন কারো সঙ্গে পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে সাক্ষাৎ না করা, নিজস্ব মোবাইল ফোন না রাখা, তত্ত্বাবধান ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার না করা ইত্যাদি। এসব শর্তের কোনওটির ব্যত্যয় হলে কারাগারের বাইরে সাজার মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ বাতিল করে দেওয়া হবে।

আনজেম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামি সংগঠন ‘আল মুহাজিরুনকে’ ২০১০ সালে যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সরকারের ভাষ্য, সংগঠনটি ইসলামি স্টেটের নেতা আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি আনুগত। জঙ্গিবাদ প্রচারের দায়ে আনজেম চৌধুরীকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালত সাজা দিয়েছিল। তবে নিজেকে রাজনীতির শিকার বলে দাবি আনজেম চৌধুরীর।

বিচারক হলরয়েড সাড়ে পাঁচ বছরে কারাদণ্ড দেওয়ার রায়ে তাকে একজন ‘বিপদজনক’ ব্যক্তি এবং ‘অপর জঙ্গিদের চেয়ে বেশি চালাক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ওই মামলায় আনজেম চৌধুরীর সঙ্গে তার সহযোগী মোহাম্মেদ রহমানেরও সাড়ে পাঁচ বছরে কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল। এ সময় বিচারক বলেছিলেন, আনীত অভিযোগের বিষয়ে আনজেম চৌধুরীর মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। সুযোগ পেলেই আবার একই ধরণের প্রচারণা চালাতে শুরু করবে সে। তবে এখন কঠোর নজরদারির আওতায় ঝুঁকি পর্যালোচনা করেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হবে।