জলবায়ু চুক্তি একটা প্রতারণা!

টানা দুই সপ্তাহ আলোচনার পর প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু ইস্যুতে যে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন বিশেষজ্ঞরা। এই চুক্তির প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের করা এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এইসব তথ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,  চুক্তিতে সুনির্দিষ্ট কর্মতৎপরতার পরিকল্পনা নেই। আর এই চুক্তি বাস্তবায়নও খুব কঠিন হবে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সেইসব বিশেষজ্ঞ মতামতের কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

স্টিফেন হ্যারিসন: এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়

জলবায়ু চুক্তিকে স্বাগত জানাই। তবে আমাদের সতর্ক হতে হবে। এটা পরিস্কার যে, শিল্পায়ন-পূর্ববর্তী যুগের সাপেক্ষে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যখন ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস; তখনই আমরা বিশ্বজুড়ে এর বিভিন্ন অভিঘাত দেখেছি। দেখেছি পাহাড় ধস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়া, খরা আর বন্যার আধিক্য। এই দুর্যোগগুলো বাড়তেই থাকবে যদি আমরা এক্ষুণি ব্যবস্থা না নিই।

ইলান কেলম্যান: ইউএলসি

চুক্তির অনেককিছুই আশাব্যঞ্জক। তবে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার কমাতে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত কিছুই তেমন করা হবে না। এছাড়া সুনির্দিষ্ট তৎপরতার জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করা নেই। তাছাড়া চুক্তি বাস্তবায়নও খুব সহজ হবে না। এই যেমন ধরা যাক মার্কিন কংগ্রেসের কথা। তাদের সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া করা যথেষ্ট কঠিন হবে।

জেমস হ্যানসন: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

এই চুক্তি একটা ভুয়া ব্যাপার। একটা প্রতারণা। ‘আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখব এবং প্রতি ৫ বছরে তা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করব’; এটা কেবল কথার কথা। এটা কেবল একটা প্রতিশ্রুতি, এরমধ্যে কোন কর্মপরিকল্পনা নেই। যতোদিন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা জ্বালানি থাকবে ততদিন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ এটা পোড়াতে থাকবে।

নিগেল আরনেল: রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়

আমি এই চুক্তিকে একটা বড় পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছি। ক’বছর আগেও এটা ভাবা যায়নি যে, বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখা এবং আস্তে আস্তে তাকে ১.৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্ব একসমত হতে পারবে। তবে যেভাবে চুক্তিটি হয়েছে, তাতে এই প্রতিশ্রুতি কতখানি রক্ষা করা সম্ভব হবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। চুক্তিতে সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মপরিকল্পনা নেই।

উল্লেখ্য, জলবায়ু  চুক্তিতে একমত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে একমত হয়েছে সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রায় দুইশটি রাষ্ট্র। শনিবার ফ্রান্সের প্যারিসে  কপ২১ সম্মেলনে এ চুক্তি অনুমোদিত হয়। চুক্তিতে ন্যায্য ও আইনসিদ্ধ বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।  চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে শুরু করবে দেশগুলো।

/বিএ/