অবৈধ ছিল ভারতের সেই প্লাস্টিক কারখানা

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের প্লাস্টিক কারখানা থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস লিক হওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২ জনে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে ছড়িয়ে পড়া ওই গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শত শত মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই কারখানাটি অন্তত পক্ষে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবৈধভাবে পরিচালিত হয়েছে। হাতে পাওয়া নথির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভারত সরকারের বাধ্যতামূলক পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই পলিস্ট্রিরিন প্লান্ট চালানোর কথা স্বীকার করেছে দক্ষিণ কোরীয় মালিকানাধীন কোম্পানিটি।noname

গত বৃহস্পতিবার ভোরে দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানি এলজি কেম’র মালিকানাধীন এলজি পলিমারস কারখানা থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গভীর রাতে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার সময়ে আশেপাশের অনেক গ্রামের মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। এই ঘটনায় ১২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে। মারা গেছে বহু গবাদি পশুও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন গ্যাসের তীব্রতায় গাছের রং বদলে গেছে।

অন্ধ্র প্রদেশের পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে এলজি পলিমারসের দাখিল করা একটি এফিডেভিট হাতে পেয়েছে গার্ডিয়ান। ২০১৯ সালের ১০ মে দাখিল করা ওই নথিতে কোম্পানিটি পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকার স্বীকারোক্তি দিয়ে লিখেছে, ‘কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা বৈধ পরিবেশগত ছাড়পত্র  আজকের তারিখ অবধি আমাদের নেই।’

ওই নথিতে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এলজি পলিমারস ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাধ্যতামূলক পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করে। ২০০১ সাল থেকে পরিচালিত কোম্পানিটি এর আগে ওই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

২০১৯ সালের মে মাতে দাখিল করা এফিডেভিট অনুযায়ী, এলজি পলিমারস ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে অবহিত করে যে তারা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক পরিবেশগত প্রয়োজন পূরণ করেনি। এর আগে কারখানাটি কেবলমাত্র অন্ধ্র প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সম্মতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়ে আসছিলো। এই বোর্ড ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কারখানাটি সম্প্রসারণের অনুমতি দিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওই বোর্ডের কাছ থেকে অনুমোদনের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয় কোম্পানিটি। তবে পরে আর কোনও সংস্থা থেকে কোনও অনুমোদন পেয়েছিলো কিনা তা স্পষ্ট নয়।

ভারতে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দূষণ সংক্রান্ত গবেষণা এবং আশেপাশের জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হয়। দিল্লি ভিত্তিক পরিবেশ আইনজীবী রিত্তিক দত্ত বলেন, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কার্যক্রম চালানো অপরাধ: দূষণ বোর্ডের সম্মতির ভিত্তিতে তারা কার্যক্রম চালাতে পারে না।’