চিকিৎসা ছাড়াই এইচআইভি থেকে মুক্তি?

১৯৯২ সালে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত এক নারী সম্প্রতি কোনও চিকিৎসা ছাড়াই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত বুধবার গবেষকেরা ওই নারীর সুস্থতার কথা জানিয়েছেন। অপর ৬৩ ব্যক্তির দেহে কোনও ওষুধ ছাড়াই ভাইরাসটির বংশবিস্তার রোধ করা গেছে। জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব মানুষ সম্ভবত কার্যকর আরোগ্য লাভ করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, জিনবিদ্যার অগ্রগতির কারণে এইচআইভি ভাইরাস থেকে নিরাময়ের এই প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়েছে।noname

অনিরাময়যোগ্য বলে পরিচিত এইচআইভি ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া নারীর নাম লরেন উইলেনবার্গ। ক্যালিফোর্নিয়ার ৬৬ বছর বয়সী এই নারী গত কয়েক দশক ধরেই গবেষকদের কাছে সুপরিচিত। কারণ গত কয়েক দশক ধরে তিনি ভাইরাসটি বহন করে আসলেও রীতিমত সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করে আসছেন।

এর আগে এইচআইভি ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন দুই পুরুষ। ক্যালিফোর্নিয়ার টিমোথি ব্রাউন এবং লন্ডনের অ্যাডাম ক্যাস্টিলেজো। তবে তারা দুইজনই বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি করিয়েছেন। ক্যান্সার চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি প্রয়োগের ফলে তাদের দেহে ভাইরাসটির প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে এই পদ্ধতিটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর এর সফলতা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গবেষকেরা।

তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত কোষের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। নতুন এই গবেষণায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসটির বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে ভূমিকা রাখে। গবেষণাটির সিনিয়র লেখক ড. জু ইয়ো জানান, এই গবেষণায় স্থান পেয়েছে সেই এক শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ, যারা কোনও ওষুধ ছাড়াই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তবে গবেষকদের ধারণা বেশ কয়েক বছর ধরে এইচআইভি প্রতিরোধে প্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করে কেউ কেউ ভাইরাসটির বংশবিস্তার রোধকারী ক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে যাদের ওপর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তাদের ক্ষেত্রেই এই সম্ভাবনা বেশি।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এইডস বিশেষজ্ঞ এবং নতুন গবেষণাটির অন্যতম লেখক ড. স্টিভ ডিকস বলেন, ‘এই অনন্য গ্রুপের মানুষেরা আমাদের সামনে এমন একটি ধারণার প্রমাণ হাজির করেছেন যাতে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা সত্যিকার সুস্থতা অর্জন করতে পারছে।’

নতুন গবেষণায় ড. ড. জু ইয়ো এবং তার সহকর্মীরা মিলে লরেন উইলেনবার্গের প্রায় দেড়শ’ কোটি রক্ত কোষ বিশ্লেষণ করেছেন আর তাতে ভাইরাসটির কোনও উপস্থিতির প্রমাণ তারা পাননি। এমনকি স্পর্শকাতর নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের করেও তারা এটি শনাক্ত করতে পারেননি। এই প্রযুক্তিতে কোনও কোষের জিনের মধ্যেও ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে সেটিও শনাক্ত করা যায়।

এছাড়া গবেষণায় অংশ নেওয়া আরও ১১ ব্যক্তির রক্তকোষের জিনের এমন স্থানে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেখান থেকে ভাইরাসটির বংশবিস্তারের কোনও সুযোগ নেই।