তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসেছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখেই এই আলোচনা শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বসফরাসের পাশে দোলমাবাহচে প্রাসাদে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আলোচনার সূচনায় উভয় পক্ষকে স্বাগত জানান। আলোচনায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের অর্ধেকই সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলেন, বিপরীতে রাশিয়ার প্রতিনিধিরা ছিলেন স্যুট পরে।
ফিদান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা জরুরি। আমি উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন একটি শান্তির সুযোগ তৈরির সদিচ্ছা দেখে আনন্দিত। এই আলোচনাই যেন দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠকের ভিত্তি গড়ে তোলে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা—একটি শান্তির দিকে, আরেকটি ধ্বংস ও মৃত্যুর দিকে। কোন পথে যাবে, তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিজেদের সিদ্ধান্তে।
২০২২ সালের মার্চে যুদ্ধ শুরুর পর সর্বশেষ সরাসরি আলোচনায় বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের আলোচনাতেও বড় ধরনের অগ্রগতির সম্ভাবনা খুবই কম।
ইউক্রেনের প্রধান আলোচক জানান, যুদ্ধবিরতি ছাড়াও রাশিয়ার হাতে অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনা এবং বন্দিদের বিনিময় নিশ্চিত না হলে শান্তির সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া বলেছে, তারা কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ শেষ করতে চায় এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে মস্কোর অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্র সংগ্রহ ও নতুন সেনা মোতায়েন করতে পারে।
তবে ইউক্রেন ও এর মিত্ররা মনে করে, ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনায় না এসে প্রকৃত শান্তিচেষ্টা ব্যাহত করে সময়ক্ষেপণ করছেন।
তুরস্কে আলোচনার প্রস্তাব দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই, কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মাঝারি পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পাঠান তিনি। ইউক্রেনও সমান মাত্রার প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে পাল্টা জবাব দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কিথ কেলগ আলোচনার সময় ইস্তাম্বুলে উপস্থিত ছিলেন। রুবিও এক বিবৃতিতে বলেন, প্রতিনিধি দলের মাত্রা বিবেচনায় বড় কোনও ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আমি ভুল প্রমাণিত হতে চাই। আমি চাই আগামীকাল সংবাদে শুনি যুদ্ধবিরতি হয়েছে, শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে।
আলোচনার কয়েক মিনিট আগে ইউক্রেনের ডিনিপ্রো শহরে বিমান হামলার সতর্কতা এবং বিস্ফোরণের খবর আসে। একই দিনে রাশিয়া জানায়, তারা পূর্ব ইউক্রেনে আরও দুটি গ্রাম দখল করেছে।
রাশিয়া বলছে, ২০২২ সালের যুদ্ধ শুরুর প্রথম সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবেই বর্তমান আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সেসময়ের শর্তগুলো—যেমন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সংকোচনের দাবি—কিয়েভের জন্য ছিল অসম ও অসম্মানজনক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেছেন, রাশিয়া পুরোনো ব্যর্থ আলোচনার কাঠামোতে নতুন আলোচনাকে ফেলতে চাচ্ছে, যা সফল হবে না।
বর্তমানে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ ও পশ্চিমা হামলার আশঙ্কা থেকেই তারা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে। তবে কিয়েভ ও তার মিত্ররা বলছে, এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ছাড়া কিছুই নয়।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, বর্তমানে ইউক্রেনে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং দেশটি এক নিঃশেষকরণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।