গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ হামলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একদিনে এত প্রাণহানির ঘটনা চলমান যুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ পর্ব বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে গাজার দুর্দশা ও খাদ্যসংকটের কথা স্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ফিলিস্তিনিদের দিকেও নজর দিতে হবে। জানেন তো, গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে আছে। তাই আমাদের উভয় পক্ষকেই দেখতে হবে।
ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে ভালো কিছু হবে বলে তিনি আশাবাদী।
শুক্রবারের বিমান ও কামান হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল গাজার উত্তরের শহর বেইত লাহিয়া ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবির। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিল আল-দেকরান জানান, এসব এলাকায় রাতভর হামলায় বহু নারী ও শিশুর প্রাণ গেছে।
বেইত লাহিয়ার ওপর প্যারাসুটে করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রচারপত্র ফেলেছে, যেখানে বলা হয়েছে, আপনি যেখানেই থাকুন—তাঁবু, আশ্রয়কেন্দ্র বা ভবনে—এলাকা ছেড়ে দক্ষিণে চলে যান।
জাবালিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি জরুরি সেবা সংস্থাগুলো। সেখানে শুক্রবার সকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ধাতব পাত ও ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে মৃতদেহ বের করার চেষ্টা চলছিল। অন্তত ১০টি মৃতদেহ সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এক বাসিন্দা ফাদি তামবুরা বলেন, আমি আজ কোথায় যাব? পশ্চিম গাজায়? সেখানে তো বোমা পড়ছে। দক্ষিণে? খান ইউনিসেও তো মানুষ মরছে। দেইর আল-বালাহ? ওখানেও হামলা। আমি, আমার সন্তান ও পরিবার—আমরা যাব কোথায়?
গাজা নগরের বাসিন্দা ইসমাইল বলেন, রাতভর বিমান হামলা ও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল যুদ্ধের প্রথম দিককার দিনগুলো ফিরে এসেছে। ভূমি যেন কাঁপছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ট্রাম্প আমাদের বাঁচাতে এসেছেন, কিন্তু দেখা যাচ্ছে নেতানিয়াহু যেমন আমলে নিচ্ছেন না, তেমনি ট্রাম্পও না।
৫ মে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, গাজায় জোরালো সামরিক অভিযান চালানো হবে। নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা পুরো গাজা উপত্যকা দখল ও মানবিক সহায়তার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন অভিযান শুরু হবে না। ট্রাম্প শুক্রবার তার মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শুক্রবার গাজাজুড়ে ১৫০টির বেশি ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালিয়েছে।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, মানবিক পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কোনও অগ্রগতি ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন। তার সফর শেষে এখন ইসরায়েল বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক অভিযান গাজার জনগণকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ থাকায় অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা।
হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম নামে ইসরায়েলি জিম্মি পরিবার ও সমর্থকদের একটি সংগঠন এক বিবৃতিতে বলেছে, ট্রাম্পের সফরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল চাইলেই গাজায় এখনও আটক থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
সংগঠনটি জানায়, এই মুহূর্তগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আমাদের প্রিয়জনদের ভবিষ্যৎ, ইসরায়েলি সমাজের ভবিষ্যৎ এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ।