ইসরায়েল-আমিরাত ‘সম্পর্ক স্বাভাবিকরণ’ চুক্তি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে আরব লীগ। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) আরব দেশের এ জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব লীগের বৈঠকে সাধারণত ঐক্যমত্য থাকলেও এবার তা হবে না। মতানৈক্যই এবারের বৈঠকে প্রভাব বিস্তার করবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
১৯৭৯ সালে মিসর ও ১৯৯৪ সালে জর্ডানের পর তৃতীয় আরব রাষ্ট্র হিসেবে গত ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুই দেশের টেলিফোন যোগাযোগ সচল করার পাশাপাশি নিয়মিত বিমান চলাচলও শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠক করতে যাচ্ছেন আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সে বৈঠকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ইস্যু প্রাধান্য পাবে। তবে সে বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই বাজছে বিভক্তির সুর।
রবিবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন একটি খসড়া প্রস্তাব আটকে দিতে চাইছে। ওই প্রস্তাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণের আগে ২০০২ সালের আরব পিস ইনিশিয়েটিভ পরিকল্পনার দিকে নজর দিতে আরব রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের উদ্যোগে চালু হওয়া ওই ইনিশিয়েটিভ অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালের সীমানা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ওই ইনিশিয়েটিভে। এটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কেবলই একটি সমাধান সূত্র।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ফাতাহ অংশের জ্যেষ্ঠ সদস্য হুসেন হামায়েল বলেন, ‘খসড়া প্রস্তাবের প্রতি বাহরাইন যে বিরোধিতা দেখিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে দেশটির অবস্থান আরববিশ্ব ও মুসলিমদের শত্রুর কাতারে চলে গেছে।’
অবশ্য মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সুর নরম করতে দেখা গেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র বলেছেন, তাদের নেতা আরব আমিরাতসহ আরব দেশগুলোর জাতীয় প্রতীকের অসম্মান হতে দেবেন না।
লন্ডনের কিংস কলেজের নিরাপত্তা অধ্যয়নবিষয়ক সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রিয়াস ক্রিয়েগ আল জাজিরাকে বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন হলো আরব লিগের মতৈক্যের একটি থিম। তবে এ বছর তা বিভাজনের কারণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে আরব বিশ্বের ঘটনাবলীর ব্যবস্থাপনায় আরব লিগের ভূমিকা আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’
আন্দ্রিয়াস মনে করেন, ফিলিস্তিনি নেতারা যে প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছেন তাতে সমর্থন দেবে না পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ।
তিনি বলেন, ‘সহসা অন্য কোনও আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে বলে মনে হয় না। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের আদান-প্রদান ও যোগাযোগ বাড়তে পারে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি তারা আর অটুট সমর্থন ধরে নাও রাখতে পারে।’
আন্দ্রিয়াসের মতে, আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে এখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট আকারে বিবেচনা করছে। তারা এখন মনে করে, এ ইস্যুকে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রতিবন্ধকতা করে রাখা যাবে না।
ফিলিস্তিনের নীতিমালাবিষয়ক নেটওয়ার্ক আল শাবাকার নীতিনির্ধারণবিষযক সদস্য মারওয়া ফাতাফতা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক আরব দেশেরই ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আরব আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তির মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ ঘটেছে মাত্র। উপসাগরীয় দেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। এটি কেবলই সময়ের ব্যাপার।’