বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার, বিএসএফ জওয়ান আটক

গরু পাচার নিয়ে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। পাচারকারীর তকমা দিয়ে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তবে এবার ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে খোদ বিএসএফ এবং দেশটির শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সহায়তা করে। এ ঘটনায় এক বিএসএফ জওয়ানসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)-এর দুর্নীতি দমন শাখা তাদের আটক করে।noname

কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপায়। তবে সিবিআই-এর নতুন তদন্তে উঠে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। দেখা গেছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং ভারতীয় শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু কর্মকর্তা সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এর আগেও বিএসএফ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে।

মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতা কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনে নেয়, তারা মূলত পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছায়।

প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেওয়া হয় গরু প্রতি দুই হাজার রুপি। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ রুপি। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পাড়ে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। দিন কয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা তল্লাশি চালিয়েছে। ভিন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে বিএসএফ-এর এক অফিসার এবং বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফ-এর ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিন রাজ্যে তার আরও বাড়ি আছে।

মালদায় পোস্টেড হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ। সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। তার ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

সিবিআই সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি।

এর আগেও বিএসএফ-এর এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায়। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও কর্মকর্তারা এখন সিবিআই-এর নজরে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, গরু পাচারকারীরা অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবি-এর সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হয়নি সিবিআই।

দীর্ঘ দিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক হয়। কিছুদিন আগেও গরু পাচারকারী আখ্যা দিয়ে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খোদ বিএসএফ-ই এসবের সঙ্গে যুক্ত। এতোদিন ধরে সবাই এটা জানলেও এখন খোদ সরকারি তদন্তেও বিষয়টি উঠে এসেছে। সূত্র: ডিডব্লিউ।