রিপাবলিকানদের অনুদান দেওয়া বন্ধ করছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করছে বহু মার্কিন প্রতিষ্ঠান। দেশটির পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালানো এবং জো বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে না নেওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় জেপি মর্গান, সিটি গ্রুপ, ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোও রয়েছে।

গত বুধবার ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালায়। গেট ভেঙে সিনেটের হলরুম পর্যন্ত পৌঁছে যায় তারা। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার অফিসে ঢুকে জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করে দেয়। যখন তারা এ ঘটনা ঘটায়, তখন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সরকারিভাবে জো বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল। হাঙ্গামার ফলে সাময়িক সময়ের জন্য অধিবেশন বন্ধ করেও রাখতে হয়। হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ক্যাপিটলের বাইরে বের করার পরে ফের অধিবেশন বসে। সেখানে বাইডেনের বিপক্ষে দাঁড়ান বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর। তারা ট্রাম্পকে সমর্থন করে বলেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ফলে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন তারা।

৩ নভেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই কারচুপির অভিযোগ করছেন ট্রাম্প। কিন্তু আদালতেও তিনি কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে পারেননি। অভিযোগ, বুধবার ট্রাম্পের বক্তব্য শোনার পরই ক্যাপিটলে অভিযান চালায় তার উগ্র সমর্থকরা।

ক্যাপিটলের ওপর হামলার ঘটনাকে ভালো চোখে দেখছেন না যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। অধিকাংশেরই বক্তব্য, এই হামলা আসলে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। তারই প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার ওপর। যেসব সংস্থা রিপাবলিকান সিনেটরদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ ব্যয় করে, তারা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্পকে যে সিনেটররা সমর্থন করেছেন, তাদের আর অর্থ সাহায্য করা হবে না।

ব্লু ক্রস ব্লু শিল্ড অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জীবন বীমা সংস্থা। প্রতি তিনজন মার্কিন নাগরিকের একজন এই বিমা সংস্থার গ্রাহক। বুধবারের ঘটনার পর তারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। যাতে বলা হয়েছে, ক্যাপিটলে যা ঘটেছে, তা অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। যারা সে ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের প্রতি নিন্দার ভাষা নেই। যে সিনেটররা ওই দিন বাইডেনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তারাও মার্কিন গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে অস্বীকার করেছেন। সে কারণেই তাদের আর অর্থ সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কার্যত একই বয়ান দিয়েছে জে পি মর্গান। তাদেরও বক্তব্য, নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা মানেন না, তাদের অর্থ সাহায্য করার প্রশ্নই ওঠে না। বস্তুত, রিপাবলিকানদের জন্য বড় অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করে জে পি মর্গান। গত নির্বাচনেও তারা বহু রিপাবলিকান প্রার্থীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ক্যাপিটলে আঘাতের ঘটনা তারা মেনে নিতে রাজি হয়নি।

সিটি গ্রুপও একই কথা জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালানোর পর ট্রাম্প সমস্ত বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন তার সমর্থকরাও। সামগ্রিকভাবে এতে রিপাবলিকান পার্টির বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরাও বুধবারের ঘটনার নিন্দা করেছেন। কিন্তু তাতেও রিপাবলিকান পার্টির ভাবমূর্তি অটুট থাকেনি। মানুষ রিপাবলিকানদের সঙ্গে ক্যাপিটল হিলের তাণ্ডবকে জুড়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা মানুষের সেই ভাবাবেগ বুঝতে পারছে বলেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। সূত্র: ডিডব্লিউ।