গন্তব্যে পৌঁছালো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী টেলিস্কোপ, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। প্রায় এক মাসের যাত্রায় পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইলের দূরের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হলো এটি। টেলিস্কোপটি গত (২৪ জানুয়ারি) সোমবার তার কক্ষপথের প্রবেশ বিন্দুতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে নাসা।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মহাজাগতিক পার্কিং স্পটে পৌঁছেছে। ফলে মহাবিশ্বের অজানা রহস্য উদঘাটনে মিশনের আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল জেমস ওয়েব।

দীর্ঘ যাত্রায় জেমস ওয়েব তার কক্ষপথে পৌঁছানোর সময় যেন সূর্যের তাপে পুড়ে না যায় বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়েছিল নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)-কে। সব শঙ্কা পেছনে ফেলে ইস্টার্ন টাইম সোমবার ২টা ৫ মিনিটের দিকে সফলভাবে চূড়ান্ত গন্তেব্য পৌঁছায়।

নাসা জানিয়েছে, টেলিস্কোপটি লাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে (এল-২) তে পৌঁছেছে। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হলো যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের অভিকর্ষের প্রভাব যেকোনও বস্তুর উপর একই থাকে। এর কারণে বস্তুটি স্থিতিশীল হয়ে যায় এবং জ্বালানি খরচ কমে যায়।

এটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর কারণে স্বস্তিতে বিজ্ঞানীরা। কারণ আগামী ১০ বা তার চেয়ে বেশি বছর মহাকাশে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে জেমস ওয়েব।

গত ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে উড়াল দেয় মহাকাশবিদ্যার ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী টেলিস্কোপ— জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রামের প্রধান বিজ্ঞানী জেমসের ওয়েবের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছোট করে যাকে সবাই ওয়েব নামেই ডাকছে। হাবলের চেয়েও অনেক অনেক শক্তিশালী এই টেলিস্কোপ। চোখ রাখবে সুদূর অন্তরীক্ষে।

৩০ বছর ধরে হাবলও ওই কাজই করেছিল। উপহার দিয়েছিল মহাকাশের দারুণ সব ছবি। তবে জেমস ওয়েবের চোখ আরও সূক্ষ্ম, আরও বড় আয়না। তাতে ধরা পড়তে পারে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সেই আদ্যিকালের ছবি। কোটি কোটি আলোকবর্ষ থেকে ছুটে আসা প্রথম দিককার নক্ষত্রের আলো শনাক্ত করার ক্ষমতাও আছে এর। অনায়াসে দেখতে পাবে দূরের গ্যালাক্সি, গ্রহ-নক্ষত্র। আরও নিখুঁতভাবে বলতে পারবে, কোন গ্রহ বাসযোগ্য, কোনটি নয়।

প্রাথমিকভাবে ওয়েব মহাকাশে তাকাবে তার ইনফ্রারেড চোখ দিয়ে। মানে খালি চোখে যা দেখা যাবে না, সেটাই দেখবে অনায়াসে। চারটি যন্ত্রের সমন্বয়ে ছবি তুলবে এটি। কাভারেজে থাকবে ০.৬ থেকে ২৮ মাইক্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য (হাবল টেলিস্কোপের ছিল ০.৮ থেকে ২.৫ মাইক্রন)।

নাসা আশা করছে, এত সূক্ষ্ম চোখে মহাকাশে নানা ধরনের বস্তু কণা ও বিল্ডিং ব্লক তৈরির রহস্য এবার ধরা পড়বেই। আর এতে করে বোঝা যাবে দূরের গ্যালাক্সিতে আদৌ অন্য কোনও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা।