যে কারণে বাড়ছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শঙ্কা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সামরিক সক্ষমতা দেখিয়ে দুদেশই এখন একে অপরের ওপর মানসিক যুদ্ধের ময়দানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টারত। ২০১৯ সালে সংঘাতের পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ দুটি তাদের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সীমিত সংঘাতও মারাত্মক দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা।

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলায় জড়িত সব পক্ষকে অকল্পনীয় শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

দিল্লির অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদ বরং পালটা দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারত সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে বলে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে।

মোদির হুমকির জবাবে পাকিস্তান হুঁশিয়ার করে বলেছে, তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

২০১৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক বহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর পাকিস্তানের ভূমিতে বিমান হামলা চালায় ভারত। জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতে ওই হামলা চালানো হয় বলে তখন দাবি করেছিল ভারত সরকার। এর জবাবে একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে ইসলামাবাদ।

ওই সংঘর্ষ দুই দিন ধরে চলেছিল।

পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর মহড়া। ফাইল ছবি: রয়টার্স

দুই প্রতিবেশী ১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে একাধিকবার সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে তারা। এমনকি তাদের সংঘাতের ঘটনা উপজীব্য করে নিজ নিজ দেশে জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র তৈরি করে থাকে দুদেশ।

সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে, কোনও পক্ষই পারমাণবিক হামলা চালাবে না। তবে সীমিত সংঘাতও বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তাদের মতে, একটি সম্ভাব্য সংঘাতে মূলত যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ব্যবহার হবে। এসব অস্ত্রে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, বেশি সম্পদ ও লোকবলের কারণে পাকিস্তানের ওপর ভারতের দাপট বৃদ্ধি পাবে। তবে, দুদেশই যে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টারের গবেষক ফ্রাঙ্ক ও'ডনেল বলেন, ২০১৯ সালের পর উভয় দেশের নীতিনির্ধারকরা বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়ে উঠেছেন। কারণ তারা দেখেছেন, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার ছাড়াই প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে স্পষ্ট বোঝাপড়ার অভাব থাকলে, যেকোনও সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

২০১৯ সালের পর ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই নতুন সামরিক সরঞ্জামে সমৃদ্ধ হয়েছে। এতে নতুন কৌশলগত হামলার দিকে তারা উভয়ই প্রস্তুত হয়ে আছে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, দুদেশই নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তারা মনে করছে, আগের তুলনায় এখন তারা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কিন্তু আসল চিত্র বোঝা যাবে কেবল বাস্তব সংঘাত শুরু হলে।

ভারত মনে করে, ২০১৯ সালে পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার কারণ ছিল পুরোনো রুশ যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরতা। সে কারণে তারা ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান ক্রয় করেছে। আরও কিছু রাফালে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য আসছে।

এর প্রতিক্রিয়ায়, ২০২২ সাল থেকে চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান জে-১০ সংগ্রহ করেছে ইসলামাবাদ। এগুলো পশ্চিমের অত্যাধুনিক রাফাল বিমানের প্রায় সমতুল্য। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বলছে, পাকিস্তানের কাছে জে-১০ মডেলের অন্তত ২০টি বিমান রয়েছে।

রাফালে যুক্ত আছে মিটিওর নামের দূরপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। আর জে-১০-এ রয়েছে প্রায় সমান সক্ষমতাসম্পন্ন চীনা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র।

২০১৯ সালে বিমান প্রতিরক্ষায় যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল, তা মোকাবিলায় রুশ এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত করেছে ভারত। অন্যদিকে, পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে নিয়েছে এইচকিউ নাইন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি রাশিয়ার এস-৩০০ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। অবশ্য এটি কিছুটা কম ক্ষমতাসম্পন্ন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স